আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)

  ২১ মার্চ, ২০২৪

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ভাঁটফুল

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ

‘এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ দেখেছিল;/বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে/কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়/সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,/শ্যামার নরম গান শুনেছিল-একদিন অমরায় গিয়ে/ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়/বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।’

‘ভাঁট আঁশ শ্যাওড়া বন বাতাসে কি কথা কয় বুঝি নাকো,/বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে,/পৃথিবীর কোন পথে দেখি নাই হায়, এমন বিজন।’ রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাশের কবিতায় এভাবেই বার বার উঠে এসেছে ভাঁট ফুলের কথা। এ এই ফুলে এতটাই বিমোহিত ছিলেন রূপসী বাংলার কবি।

এই বসন্তেও ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা ভাঁট ফুল। চারদিকে শিমুল-পলাশ-পারিজাতের লালের আয়োজনে মধ্যে সখ্য গড়ে তুলে শ্বেত-শুভ্র ভাঁট ফুল ছড়িয়ে দিয়েছে অন্যরকম মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। ভাঁটফুলকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ভাইট ফুল। ফুলটি গ্রামীণ জনপদে অতি পরিচিত বুনো ফুল।

পথের ধারে দুপ্রান্তে, পুকুরের ধারে, বনেবাদরে প্রকৃতিকভাবে জন্ম নেয় ভাঁট ফুল। ঝোপঝাড়ে, কবরস্থান, শ্মশান, কবরস্থানসহ পরিত্যক্ত জায়গায় ভাঁটগাছ জন্মে অবহেলায়। বসন্তে শ্বেত-শুভ্র ভাঁট ফুল ফোটে থোকা থোকা। নীরবে বিলিয়ে দেয় আপন সৌন্দর্য। এর স্নিগ্ধ রূপ শোভায় সুরভীত পাখি প্রজাপতি মৌমাছিসহ অনেক পতঙ্গ। একই সঙ্গে নয়নাভিরাম ভাঁটফুলে পুলকিত হয়ে উঠে প্রকৃতিপ্রেমীদের মন।

উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আজিজার রহমান বলেন, ভাঁটগাছ অবহেলায় ও অযন্তে জন্মায়, চাষ ছাড়াই প্রকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত ফুল ফুটে। ফুলটি নানা কারুকাজে ভরা। এ ফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কান্ডকে প্রকৃতি নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে যেন। ফুলের পুংকেশরই এ ফুলের প্রধান সৌন্দর্য। সাদা রঙের এ ফুলে রয়েছে পাঁচটি পাপড়ি। প্রতিটি ফুলের অভ্যন্তরে বেগুনি রঙের ঢেউ ফুলটিকে করেছে আরো আকর্ষণীয়।

উপজেলার আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুধীর চন্দ্র বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও এর পাতা তোতো, এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়। অনেকে কৃমিনাশক হিসেবে এর পাতা ফুলের রস খেয়ে থাকেন। চর্মরোগে নিয়মিত ফুলের রস মালিশ করলে উপশম মেলে। পাতার রস গ্যাস নির্মূলসহ ছোটদের মুখে অরুচি, পেট ফাঁপা ও জ্বর সারাতে কার্যকরী। গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাইট পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়। বসন্ত শেষে ভাঁট গাছ কেটে রান্নার জ্বালানির চাহিদা মেটানো হয়।

বর্তমানে বসতবাড়িসহ ফসলি জমি বেড়ে যাওয়ায় ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করে নিধন করা হচ্ছে বন-জঙ্গল। রাস্তাঘাট সংস্কার ও বর্ধিতকরণে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছগাছড়া। এতে প্রকৃতি থেকে উজার হয়ে যাচ্ছে ভাঁটগাছ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close