লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

  ০৮ অক্টোবর, ২০২২

ফানুস উড়বে আজ পাহাড়ের আকাশে

আজ থেকে তিন দিনব্যাপী পাহাড়ে শুরু হচ্ছে সেখানে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ বা প্রবারণা পূর্ণিমা। ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ মার্মা শব্দ, এর অর্থ উপবাসের সমাপ্তি। অন্য অধিবাসীরা একে ‘ওয়াহ’ বলে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষব্রত (উপবাস) থাকার পর ধর্মীয় গুরুদের সম্মানে এ বিশেষ উৎসব পালন করে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসব পালন করেন।

তিন দিনব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলো সেজেছে নতুন সাজে। চলছে আনন্দের বন্যা। পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে ধুম পড়েছে বেচাকেনার। ফানুসে রঙিন হবে রাতের আকাশ। এদিকে উৎসব আরো বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালনের জন্য উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ৭৮টি বৌদ্ধবিহার ও পাড়ায় সরকারি আর্থিক অনুদানও প্রদান করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।

শনিবার সকালে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসব। পরে ছোয়াইং দানের পর সন্ধ্যায় শুরু হবে ফানুস উড়ানো। নদীতে জাহাজ ভাসানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। চীনা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রং, বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এ সময় সূত্রপাত ও কীর্তন হয়, যুবকরা নৃত্য করেন।

ফানুস উড়ানোর আগে রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি। এ জন্য স্থানীয় ক্যাং ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। শিশু কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা নতুন পোশাক পরে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রবিবার সকাল থেকে বিহার ভান্তের মাঝে ছোয়াইং দান।

তরুণ-তরুণীরা সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীতে হাজার হাজার বাতি ভাসিয়ে ও জাহাজ ভাসিয়ে প্রদীপ পূজা করবেন। বৌদ্ধবিহারে অবস্থানরত উপাসক-উপাসিকাকে তরুণ-তরুণীরা ঢোল বাজনা বাজিয়ে গোসলের আয়োজন করবেন। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের পাড়া ও কেয়াংগুলোতে পৃথকভাবে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে লামা উপজেলার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার ছাড়াও গজালিয়া, রূপসীপাড়া এবং পৌর এলাকার সাবেক বিলছড়ি, ফাইতং, ছাগল খাইয়া বৌদ্ধবিহারে জাঁকজমকভাবে এ উৎসব পালন হবে বলে জানা গেছে। বিহারে বিহারে ভান্তেগণ দায়ক দায়িকার উদ্দেশে ধর্ম দেশনা ও পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার।

লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহারের ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উদযাপন কমিটির জতিন মার্মা, পৌরসভা এলাকার ছোট নুনারবিলপাড়ার বাবু মং মার্মা, বড় নুনারবিলপাড়ার মংছিং প্রু মার্মা, গজালিয়া ইউনিয়নের গাইনদাপাড়ার উথোয়াই মার্মা জয় বলেন, গতবার করোনাভাইরাসের কারণে উৎসব বৃহৎ আকারে পালন করা যায়নি। তবে এ বছর যথাযথ মর্যাদায় জাঁকজমকভাবে উৎসব পালনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শনিবার শুরু হয়ে পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার।

এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উৎসব যেন নির্বিঘ্নে পালন করতে পারেন সেজন্য কেয়াং বৌদ্ধবিহারগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি এবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close