রায়হান সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

  ০৬ জুলাই, ২০২০

যে বিদ্যালয়ে পাল্টে গেছে গ্রাম

ফসলের মাঠের বুক চিরে সোজা রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভেতর। মেঠোপথের দুই পাশে যেন অন্যরকম অনুভূতি। বাতাসে যেন ছড়িয়ে পড়ছে সবুজের ঘ্রাণ। গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টির কারণে পুরো গ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে এবং আলোকিত হচ্ছে আশপাশের মানুষ। বিশেষ করে গ্রামের শিশুদের আনন্দ আর ধরে না! তারা নিজ গ্রামে স্কুলটি পেয়ে হেসেখেলে বিদ্যার্জন করছে এখন।

ছোট বেলায় দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে চোখমুখে পথ না দেখে পড়ালেখার মায়া ছেড়ে পরিবারের অন্য দশজনের মতো মহিউদ্দীন নামের এক যুবককে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল জীবিকার তাগিদে অনেক দূরে। এতে বাড়িতে সচ্ছলতার দেখা মিললেও অন্তরে রয়েছে তার ছোট বেলায় পড়ালেখা করতে না পারার দুঃসহ স্মৃতি।

মহিউদ্দীনের বাড়ি থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল যেটির দূরত্ব কমপক্ষে দুই কিলোমিটারের কাছাকাছি। তখন থেকে ভাবতে থাকেন বড় হয়ে নিজের জন্য না হলেও এলাকাবাসীর জন্য আশপাশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন তিনি। যাতে কোনো শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাহত না ঘটে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা মিরিখিল নতুনপাড়ার মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ মহিউদ্দীনের। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি নয়। তারপরও তার সবসময় চিন্তা জাগে এলাকায় শিক্ষার আলোকে প্রসার বিস্তার করতে।

তার বাড়ির পাশে পারিবারিক ৩৩ শতক জমির ওপর একটি বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই এলাকায় বিগত সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হেঁটে অনেক দূর এগিয়ে বিদ্যালয় যেতে হতো। মিরিখিল এলাকায় কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে ৩ হাজারের অধিক পরিবারের বসবাস রয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এলাকাবাসীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় উঠান বৈঠক করেছেন।

লোহাগাড়ার স্কুল পাগলা খ্যাত আধুনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল কবির ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বাবর বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল কবির। বিদ্যালয় নির্মাণে লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে মিরিখিল সোলতান আহমদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় বছরের আগস্টে এবং শেষ হয় ডিসেম্বর। বিদ্যালয় নির্মাণে কংক্রিট দেন লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন, ইট দেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল, টিনের ব্যবস্থা করেন চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু কোম্পানি, দরজা-জানালা রিয়াজ উদ্দীন বাজার বণিক সমিতির উপদেষ্টা জসিম উদ্দীন কবির। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮৭ জন, চারজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনেই আমরা সবাই আনন্দিত। কারণ আমাদের ছেলে-মেয়েদের পাহাড়ি মেঠোপথ বেয়ে আর কষ্ট করে দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়তে হবে না। এতে করে তাদের আনন্দ হবে কারণ বেশি দূর হেঁটে স্কুলে যেতে হবে না তাই। তারা নিজের গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করে মজা পাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, এতদাঞ্চলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমরা সত্যিই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। আমাদের আগে অনেক দূর গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে হতো। এখন গ্রামের পাশে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে সুযোগ পাচ্ছি। লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লোহাগাড়ায় বিদ্যালয়বিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয় উদ্যোগকে প্রেরণা দিয়েছি। কয়েকবার মিরিখিলে উপস্থিত হয়ে গ্রামবাসীর পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছি। ভবিষ্যতেও বিদ্যালয়টির যেকোনো কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৌছিফ আহমেদ জানান, অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াচ্ছে দুর্গম এলাকায় ব্যক্তির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি ওই এলাকার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কোনো কিছু দরকার হলে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি। বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চুনতি মিরিখিল গ্রামের সর্বস্তরের জনসাধারণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close