প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মে, ২০২০

ঘূর্ণিঝড়ের নাম যেভাবে...

ঘূর্ণিঝড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বছরের নভেম্বর কিংবা মে মাসের দিকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। কখন, কোথায়, কোন ঝড় হয় তা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। ১৯৪৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে ২০০৭ সাল থেকে। এর আগে একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের নামকরণ হতো না। ২০০৭ সালের নভেম্বরে আঘাত হানা প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয় ‘সিডর’।

তখন থেকেই বিভিন্ন সময় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করা হয়। যেমনÑ সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, নার্গিস, ফণি ও বুলবুল ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আম্পান’। যেভাবে এলো ‘আম্পান’ নামটি কোনো নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন তালিকার ক্রম মেনে নাম বরাদ্দ হয়। সে অনুযায়ী এ অঞ্চলে সৃষ্ট নতুন ঘূর্ণিঝড়টির নাম হয়েছে ‘আম্পান’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম। থাই শব্দ ‘আম্পান’ অর্থ শক্তিশালী। ২০০৪ সালে সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবিত নাম নিয়ে ৬৪টি নামের যে প্রথম তালিকাটি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা দিয়েছিল, ‘আম্পান’ তার সর্বশেষ নাম।

সূত্র জানায়, ক্রান্তীয় অঞ্চলের আটটি দেশ প্রথমবার ২০০৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য ৬৪টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকার শেষ নামটি ছিল ‘আম্পান’। প্রথম তালিকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারও একটি নতুন নামের তালিকা তৈরি হয়। এবারের তালিকায় ১৩টি দেশ মিলিয়ে ১৬৯টি নাম দিয়েছে। ফলে পূর্বনির্ধারিত একটি নামের তালিকা থেকে একেকটি ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। কোনো ঝড়ের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৩৯ মাইল হয়, তাহলে তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলো এ দায়িত্ব পালন করে। ঘূর্ণিঝড়ের এমন নাম দেওয়ার কারণ সব শ্রেণির মানুষ যেন সহজে মনে রাখতে পারে।

কারা দেয় এই নাম : ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনস্থ বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি। সমুদ্রের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এই আঞ্চলিক কমিটি তৈরি করে। যেমন উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করবে ডড়ৎষফ গবঃবড়ৎড়ষড়মরপধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ (ডগঙ)-এর আটটি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ওমান। এদের একত্রে বলা হয় ‘স্কেপে’।

কীভাবে নির্বাচন করা হয় : আঞ্চলিক কমিটির সদস্য দেশগুলো সম্ভাব্য ঝড়গুলোর জন্য আগেই বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করে রাখে। যখন ঝড় সৃষ্টি হয় তখন নামগুলো ব্যবহার করা হয়। একই নাম দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। আগে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ঝড়গুলোর নাম হতো সন্তদের নামে। যেমন সান্তা আনা, স্যান ফেলিপ (১ম), স্যান ফেলিপ (২য়)। এরপর ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মানুষের কাছে এসব নাম একটু বেশিই জটিল শোনায়। এ ধরনের নামের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট নামকরণ লিখিত বা মৌখিক যেকোনো যোগাযোগে অধিকতর সহজ। ফলে এ ধরনের নাম ব্যবহার অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। যেমন ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঝড়টি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে বলার চেয়ে ‘বুলবুল’ ধেয়ে আসছে বলা অনেক সহজ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে দ্রুত সহায়ক। স্কেপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close