রাকিবুল রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পেশায় নরসুন্দর : মন পড়ে রয় গান ও কবিতায়

নরসুন্দরের কাজ নরকে (মানুষ) সুন্দর করা। হাতের নিপুণ কৌশলে খুর-কাঁচি দিয়ে একজন নরসুন্দর সেই কাজ সম্পন্ন করেন নিখুঁতভাবে। তবে লিটন ভিখারি (৪১) নামে এমন এক নরসুন্দরের পাওয়া গেছে যিনি শুধু নরকে সুন্দরই করেন না, সুন্দর গান ও কবিতা লিখতেও পারেন। পাশাপাশি নিজের লেখা গান নিজেই সুর করেন তিনি। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এই শিল্পী তার গানের অ্যালবাম ও কবিতার বই বের করতে পারেননি আজও।

লিটন ভিখারির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বর্ধনপাড়া গ্রামে। অভাবের তাড়নায় পৈতৃক সূত্রে এই পেশায় জড়িত হন তিনি। সম্প্রতি নরসুন্দর লিটনের দেখা মিলে বর্ধনপাড়া গ্রামে তার সেলুনে। তিনি বলেন, অভাবের কারণে ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে নরসুন্দরের কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে। বাবার সঙ্গে কাজ করতে যাওয়ার সময় মনের ভেতর থেকেই এক-দুটি গানের কথা বেরিয়ে আসত। কিন্তু লেখাপড়া না জানার কারণে গানগুলো আমি লিখে রাখতে পারতাম না। ১৯৯৩ সালে ঢাকার একটি সেলুনে কাজ নেওয়ার পর সহকর্মী শাহজাহান আমাকে তার সঙ্গে রেখে ৫ বছর লেখাপড়া করায়। তখন আমি নিজে পড়া ও লিখা অনেকটা আয়ত্ত করে ফেলি। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘দম যে বাবুই পাখির বাসা’ শিরোনামে একটি গান লিখে নিজেই সুর করে ফেলি।

বর্ধনপাড়া গ্রামের ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নরসুন্দরের কাজ করেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি গান ও কবিতা লিখেন। কিন্তু নিজের এ কাজ চুরি হতে পারে এই ভয়ে তিনি এসব কাউকে দেখাতে চান না। তবে সেলুনে বসে প্রতিদিন গানের রেওয়াজ করায় তার প্রতিভার বিষয়টিও প্রকাশ হয়ে যায়।

লিটন ভিখারি দীর্ঘ ২০ বছরে প্রায় ৮০টির মতো গান লিখে নিজেই সুর করেছেন। তার বেশির ভাগ গান, বিচ্ছেদ, বাউল ও ফোক ঘরানার। তবে আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এই গানগুলো রেকর্ড কিংবা অ্যালবাম আকারে বের করতে পারেননি। গান লেখার পাশাপাশি এই শিল্পী কবিতাও লিখেছেন বেশ কয়েকটি। ভবিষ্যতে নিজের বাছাই করা কবিতা নিয়ে একটি বই বের করার ইচ্ছা আছে তার।

লিটন ভিখারি বলেন, আমি শুধু আমার গানগুলো লিখে সুর করেছি। এসব গান কখনো বাদ্যযন্ত্র কিংবা মিউজিকের সঙ্গে যোগ করে বাজানো হয়নি। তাই গানগুলো নিয়ে ভালোভাবে কাজ করলে প্রত্যেকটি গান জনপ্রিয়তা পাবে।

লিটন ভিখারির স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে সামীউল হাসান নবম শ্রেণিতে, ছোট ছেলে মেহিদি হাসান মাদরাসায় হেফজ ও ছোট মেয়ে ফাতেমা শিশু শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন নরসুন্দরের কাজ করে লিটনের আয় হয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ টাকা দিয়েই চলে তার সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ। লিটনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়। এমন সময় সেলুনে আসলেন, গ্রামের বাসিন্দা মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি লিটনের সেলুনে আসলে তিনি আমাকে নিজের লেখা গান ও কবিতা শোনান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই স্বশিক্ষিত একটা মানুষ কীভাবে গান ও কবিতা সৃষ্টির কারিগর হয়ে উঠলেন, তা ভাবাই যায় না। কথার রেশ টেনে লিটন বলেন, ভাবলেই লাভ কি শহীদ ভাই, গান-কবিতা কেনোটাই তো কাজে লাগাতে পারলাম না। তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা কবিতা লিখছি। যদি কোনো দিন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে এ কবিতা উপস্থাপন করতে পারি তাহলে আমার জীবনটা ধন্য হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close