দিনাজপুর প্রতিনিধি

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

বাম্পার ফলনেও বিপাকে দিনাজপুরের সবজি চাষি

সবজির বাম্পার ফলন ফলিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের কৃষকরা। বাজারে সবজির দাম পড়ে গেছে, পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না, অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয়ও উঠছে না। ঋণ নিয়ে আবাদ করে এখন চাষিদের চোখের পানি যেন থামছেই না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুর বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলা শহর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫ টাকায় ৩ কেজি মুলা, অর্থাৎ প্রতিকেজি মুলার দাম পড়ছে দেড় টাকার সামান্য বেশি। বেগুন ৬ টাকা কেজি, বরবটি ১২-১৫ টাকা, ঢেঁরস ১০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৫ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ৬ টাকা, পেয়াজ ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজিও বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। শুধু শাক বিক্রি করে এখন পর্যন্ত কৃষকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। এটা গেল খুচরা বাজার। আর পাইকারী বাজারের অবস্থা আরো নাজুক। কৃষক গফুর মিয়া বলেন, এবার তিনি ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি এবং মুলা চাষ করেছিলেন।

উৎপাদন ভালো হলেও সবজির দাম না থাকায় তিনি মানুষিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি কিস্তির মাধ্যমে জমি চাষ করেন বহুদিন ধরে। কীভাবে মূল টাকাটা সবজি বিক্রি করে উঠাতে পারবেন তা তিনি নিজেও জানেন না। ঋণ করে চাষ করা কৃষক আলেয়া বেগমও পড়েছেন বিপাকে। তিনি ১ বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। কিন্তু বেগুনের দাম নেই। মূলধনও উঠছে না। কীভাবে শোধ দিবেন সেই টাকা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, দিনাজপুরে এবার সবজির ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দামের বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। ব্যবসায়ী সমিতি কিংবা বাজার মনিটরিং সেলের দায়িত্বে যারা আছেন এটা তাদের কাজ।

শুধু সবজি নয়, দিনাজপুরের মরিচ চাষিদের এবার মাথায় হাত পড়েছে। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। উৎপাদন খরচ না উঠায় দিশেহারা মরিচ চাষিরা। অনেক কৃষক মরিচের আবাদ বাদ দিয়ে অন্য আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পাইকারি বাজারে ক্রয়কৃত মরিচ খুচরা বাজারে দ্বিগুণ তিন গুণ দামে বিক্রি হলেও প্রান্তিক চাষিদের ভাগে শূন্য।

এবার কাঁচা মরিচের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ শ ৩৬৪ হেক্টর। গত মৌসুমে মরিচের আবাদ হয়েছিল ৮ শ ২২৩ হেক্টর। শিলাবৃষ্টি, প্রলম্বিত খরা, মোড়ক ও অপরিমিত বৃষ্টিতে মরিচ উৎপাদন ব্যাহত হলেও ভাটা পড়েছে দামে। অথচ উৎপাদন কম হলেও চাহিদা মতো দাম বেশি হয়। তবে এবারে কৃষকদের ধারণা একেবারে উল্টো। মাসখানেক আগেও মরিচ খেতের যতেœ ব্যস্ত সময় পার করেছে চাষিরা। দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা যতœ নিচ্ছেন না খেতের। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচের দাম ১৩-১৬ টাকা। অথচ প্রতি কেজি মরিচ খেত থেকে উঠাতে খরচ হচ্ছে ১০-১৩ টাকা। প্রতি কেজির ভাড়া ২ টাকা এবং খাজনা (টোল) ১ টাকা। এতে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে খেত মালিকের কিছুই থাকছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেই কৃষি আবাদ হয়ে থাকে। ঝুঁকির মধ্যে থেকেই চাষিরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দাম না পেলে চাষের আগ্রহ হারাবে। দামের বিষয়টি বাজার মনিটরিং সংশ্লিষ্টরা দেখভাল করে থাকেন বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close