কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্র্যাকের মতবিনিময়

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরো অর্থের প্রয়োজন

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সহায়তা দিতে আরো বেশি অর্থ প্রয়োজন। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্র্যাকের প্রয়োজন ৫ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ব্র্যাক এখন পর্যন্ত পেয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার যা প্রয়োজনীয় অর্থের অর্ধেকেরও কম। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অর্থ সংকট আরো প্রবল। গতকাল রোববার ব্র্যাক সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ মুসা। মতবিনিময়ে আরো অংশ নেন ব্র্যাকের পরিচালক আকরামুল ইসলাম, মৌটুসী কবীর এবং কে এম মোর্শেদ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক জানান, জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার জন্য ৪৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় পাওয়া যায় ৩৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি বরাদ্দ নিয়েই শুরু হয়।

তিনি বলেন, মোট বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এবং ২৫ শতাংশ কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য ব্যয়ের শর্ত রয়েছে। মোট বরাদ্দে ঘাটতি থাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয়ে ঘাটতি আরো বেশি প্রকট হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ মুসা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন একার বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানবিক সহায়তা জোরদার করতে তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই দায়িত্ব নিতে হবে।

ব্র্যাকের পরিচালক আকরামুল ইসলাম জানান, ব্র্যাক শুরুতে মানবিক দায়িত্ব থেকেই নিজেদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে ছিল নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য স্যানিটারি টয়লেট স্থাপন, ক্যাম্পের ঘরের মেঝেতে শোয়ার উপযোগী মাদুর বিছানো, নিরাপদ খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ। প্রাথমিক অবস্থার পর রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থাসহ তাদের আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য একাধিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে ব্র্যাক।

তিনি বলেন, যেহেতু কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হচ্ছে সে কারণে তারা প্রথমে শিক্ষার জন্য খোলা সাময়িক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছেন। এরই মধ্যে ২৫০টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, বাকি আরো ৭০০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

কে এম মোর্শেদ বলেন, যদি ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয় সেক্ষেত্রে ভাসানচরেও ব্র্যাক রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা পরিচালনায় পূর্ণ সক্ষম।

তিনি বলেন, এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসান চরে নেওয়া হলেও বাকি ৯ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে থেকে যাবে। ফলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রতিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

মৌটুসী কবীর বলেন, ব্র্যাক রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান ত্বরান্বিত করতেও উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য এরই মধ্যে একটি বিশ্বমানের তথ্যচিত্র নির্মাণ করে তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রচার করছে ব্র্যাক।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়েই এ সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত হবে। এ সমাধান যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। আর এ সমাধানে মূল দায়িত্ব মিয়ানমারেরই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close