নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ মে, ২০১৮

ঢাকার রাস্তায় উটকো বিপদ মোটরসাইকেল!

রাজধানীতে চলাচলকারী মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া। কোনো সিগন্যাল মানতে চান না তারা। যানজটে এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেন না। সুযোগ পেলেই ছুটে চলেন ফুটপাত ধরে। এতে ফুটপাতে পথচারীদের সঙ্গে প্রায়ই নানা বিতন্ডায় জড়াতে দেখা যায় তাদের। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচলে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না তারা। ট্রাফিক আইন মেনে না চলার কারণে রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এছাড়া মোটরসাইকেলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন যে রোগী ভর্তি হচ্ছেন তার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এদিকে, রাজধানীর সড়কে চলা মোটরসাইকেলগুলো কোনো সংকেত বা বাধা দিয়ে আটকে রাখাও দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতি, যখন তখন ওভারটেকিং প্রবণতা, হেলমেটবিহীন গাড়ি চালনা এবং দুইয়ের অধিক আরোহী নিয়েও বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চলছে দেদার। এর ওপর রয়েছে বাস, অটোরিকশা, রিকশাসহ অন্য পরিবহনের সঙ্গে রেষারেষি। ফলে সব সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলছে বাহনগুলো।

পরিবহন বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর পারস্পরিক প্রতিযোগিতা ও আইন ভঙ্গের প্রবণতা রোধ করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরসাইকেল অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শও তাদের। তবে বিআরটিএর দাবি, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা জাকিরুল আহসান বলেন, মোটরসাইকেলের আতঙ্কে রাজধানীর ফুটপাত ধরে হাঁটতেও ভয় লাগে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না বাইকাররা। সরু ফুটপাত কিংবা অলিগলি বাইক চলছে দুর্বার গতিতে। এতে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। মোটরসাইকেল চালকদের এই বেপরোয়া গতি থামানো যেন কেউ নেই। অনেক ফ্রি স্টাইলে চলছে তারা। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে চলতি বছরের গত তিন মাসে ভর্তি হওয়া রোগীর বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। একটি ছোট যান কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি বেশি। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে চালক-আরোহীরা। তবু যেন তাদের বেপরোয়া গতি কমছে না।

বিআরটিএর হিসাব মতে, ২০১৭ সালে শুধু ঢাকা থেকেই নিবন্ধিত হয়েছে পৌনে ১ লাখ গাড়ি। আর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ২৩ হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়ি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং হেলম্যাটবিহীন চালকদের এড্রেস করতে হবে। এভাবে যদি নজরদারির আওতায় আনা যায় তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব।

এদিকে, ঢাকায় রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। শহরের বাইরে থেকে এসেও যুক্ত হচ্ছে অনেক গাড়ি। নানা রকম প্রচারণা এমনকি আইনি পদক্ষেপ নিয়েও রোধ করা যাচ্ছে না মোটরসাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিআরটিএ জোর দিচ্ছে চালক ও আরোহীর সচেতনতা বাড়ানোর ওপর। অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপ্রবণ বাহন মোটরসাইকেল। তাই ট্রাফিক আইন মানার ওপর জোর দেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছেই। বেপরোয়া গতি ও চালকদের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী। তবে মোটরসাইকেল চালকরা যেন আইনের ভেতর থেকে সব আইন মেনে চলেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। শিগগিরই মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist