নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ মে, ২০১৮

গ্যাস তেল সিগারেট মোবাইল খাত থেকে বেশি রাজস্ব পায় এনবিআর

সরকারের ঘরে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট এসেছে সিগারেট ও মোবাইল ফোন খাত থেকে। বিশেষ করে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের জন্য এই তিনটি খাতের ওপরই বেশি ভর করতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একাধিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

গত পাঁচ মাসে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট আদায় করেছে ১৬ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নয় হাজার কোটি টাকাই এসেছে সিগারেট ও মোবাইল ফোন খাত থেকে। এই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে শুধু সিগারেট খাতেই ভ্যাট আদায় হয়েছে সাত হাজার ৬৪ কোটি টাকা। একই সময়ে মোবাইল ফোন খাত থেকে আদায় হয়েছে এক হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।

সরকারের আহরিত ভ্যাটের ৬০ শতাংশেরও বেশি আদায় হয় এলটিইউ অফিসের মাধ্যমে। দেশীয় ও বহুজাতিক বড় আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে তালিকাভুক্ত। বর্তমানে এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের অধীনে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়। এর মধ্যে সিগারেট কোম্পানি, মোবাইল ফোন কোম্পানি ও গ্যাস খাতের কোম্পানির কাছ থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হয়। বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করার সময় দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত জনগণের কাছ থেকে এই ভ্যাট নিয়ে সরকারের কোষাগারে জমা দেয়।

এদিকে, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করেছে এক লাখেরও বেশি প্রতিষ্ঠান। যদিও ভ্যাট দেয় মাত্র ৩৩ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান। ১৯৯১ সালে ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ভ্যাট খাতে এক হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। সবশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, এলটিইউ অফিসের

সূত্র জানায়, এলটিইউ অফিসের আদায় করা ভ্যাটের ৪৮ শতাংশই আসে দুটি সিগারেট কোম্পানির কাছ থেকে। গ্যাস খাত থেকে আসে প্রায় ১৮ শতাংশ। গ্যাস খাতের ১২টি কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে ভ্যাট আসে। এ ছাড়া পাঁটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে ১২ শতাংশ, ব্যাংক খাত থেকে ৫ শতাংশ, ওষুধ খাত থেকে ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতের আরো ১০৯টি ইউনিট থেকে আসে এলটিইউ-ভ্যাটের ১২ শতাংশ। এলটিইউ অফিসের অধীনে ভ্যাট দেওয়া শীর্ষ ১০টি খাত হলো সিগারেট, মোবাইল ফোন কোম্পানি, ওষুধ, কোমল পানীয়, সিমেন্ট, প্রাকৃতিক গ্যাস, ব্যাংক, বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা, সাবান কোম্পানি ও সিরামিক।

এলটিইউর হিসেবে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর ভ্যাট বাবদ রাজস্ব এসেছে ৫৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এর ৪৩ শতাংশই জোগান দিয়েছে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান। যার ২৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ আসে তামাক, ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ গ্যাস এবং ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ টেলিকম খাত থেকে এসেছে। বাকি ৩ শতাংশ অন্যান্য খাতের।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, মোট ভ্যাটের ২০ শতাংশই আসে তেল ও গ্যাস, সিগারেট এবং মোবাইল ফোন সেবা থেকে। এই তিনটি খাতেই বর্তমানে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় হয়। বেশির ভাগ কমিশনারেটের ভ্যাট আদায়ের তালিকায় ওই তিনটি খাতই বরাবরের মতো শীর্ষে ছিল।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৬ বছরে (২০০১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত) মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো থেকে সরকার ২৪ হাজার ৫৯৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব এসেছে গ্রামীণফোন থেকে। যার পরিমাণ ১১ হাজার ৩৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সবচেয়ে কম রাজস্ব এসেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক থেকে। যার পরিমাণ ৪৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। রবি আজিয়াটা থেকে ৫ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৩ লাখ, বাংলালিংক ৫ হাজার ২০৮ কোটি ৩ লাখ, এয়ারটেল এক হাজার ৫৯৫ কোটি ৬৯ লাখ ও সিটিসেল থেকে ৬৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব এসেছে।

এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এনবিআর যদি ১০০ টাকা আয় করে তার ৪৭ টাকা পায় মোবাইল ফোন খাত থেকে।’ এদিকে এলটিইউ-ভ্যাট অফিসের প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা মামলায় আটকে রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছে বড় অঙ্কের অর্থ আটকে রয়েছে। এ ছাড়া বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ও পেট্রোবাংলার আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছেই আটকা রয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এলটিইউর তথ্যমতে, দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধেই দুই হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। বাংলালিংক ও রবির বিরুদ্ধেও হাজার কোটি টাকারও বেশি ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রবির সঙ্গে একীভূত হওয়া এয়ারটেলের কাছে এনবিআরের পাওনা রয়েছে ৩৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধেও ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামের আরেকটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছেও এনবিআরের পাওনা রয়েছে ৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ৪ হাজার ৮৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকার ভ্যাট বা কর ফাঁকি দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এনবিআরের পাওনা হিসেবেও বিবেচিত।

জানা গেছে, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট আদায় করেছে ১৬ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এলটিইউয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি আরো বেশি বলে জানিয়েছেন এলটিইউয়ের কমিশনার মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভ্যাট খাতে সার্বিক প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। আর এলটিইউয়ের প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাস খাত থেকে বকেয়া ভ্যাটের ছয় হাজার কোটি টাকা আদায় করা গেলে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কার্যক্রম জোরদার ও তদারকি বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৩৬ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ৩০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর আদায় হয়েছিল ২৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। আর চলমান অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist