গাজী শাহনেওয়াজ

  ০১ মে, ২০১৯

বিএনপির এমপিরা এবার সংসদীয় গ্রুপে

গত ১০টি সংসদের মধ্যে চারবার সরকারি দলে ও দুবার বিরোধী দলে থাকলেও এবার সংসদীয় গ্রুপে ঠাঁই মিলছে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের। আর এ গ্রুপের নেতা হচ্ছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. হারুনুর রশীদ। শিগগিরই সংসদীয় গ্রুপ গঠন ও নেতা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে দলটিতে। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে হারুনুর রশীদকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এদিকে, সংবিধানে ৬টি সাধারণ আসনের বিপরীতে একটি সংরক্ষিত আসনের বিধান থাকায় এই পদে আসার সম্ভাবনা আছে বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গ্রুপ গঠনের সুযোগ রয়েছে। আর সংবিধানে ৬টি সাধারণ আসনের বিপরীতে একটি সংরক্ষিত আসনের বিধান রযেছে। সেক্ষেত্রে একটি আসন পাবে বিএনপি। তাদের মনোনীত প্রার্থী ওই আসনে বিজয়ী হয়ে শপথ নেবেন।

এদিকে, সংসদ সদস্য হিসেবে বিএনপির নির্বাচিত ৫ জন সদস্য শপথ নিলেও নেননি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সংসদে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি পরিস্কার করেননি। তিনি বলেন, ‘চিঠি আমার কাছেই আসতে হবে বিষয়টি তা তো না। যদি সময়ের মধ্যে সংসদে চিঠি আসে, তা হলে তো সমস্যা নেই।’

স্পিকার বলেন, ‘যদি তিনি বলে থাকেন চিঠি দেননি, তা হলে আসেনি।’ তা হলে ফখরুলের আসন কি শূন্য হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নে স্পিকার বলেন, ‘আমি তো বলিনি।’

জানতে চাইলে সদ্য শপথ নেওয়া বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদে এসেছি। দল ও জনগণের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। এজন্য সংসদ অধিবেশনের পর আনুষ্ঠানিক বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করব। ওই বৈঠকে সংসদীয় গ্রুপ গঠন ও গ্রুপের নেতা নির্বাচন হবে। তবে ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি চারবারের এমপি। আপাতত আমিই সংসদীয় দলের নেতার দায়িত্ব পালন করব।’

এখন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা হারুনুর রশীদ বলে জানান আরেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন উনি (হারুনুর রশীদ) আমাদের মুখপাত্র। এরপর যদি মহাসচিব আসেন, তা হলে তিনি সেই দায়িত্ব নেবেন।’ নারী আসনের বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বলে জানান।

এ বিষয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৫ বারের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘কে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা হবে, সেটা আমরা বসে ঠিক করব। তবে আমাদের প্রধান এজেন্ডা দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা শপথ নিয়েছি। তিনি (তারেক রহমান) যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে সংসদীয় বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’ নারী আসনের বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় ওই সংসদে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এর আগে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনও বর্জন করায় সংসদের বাইরে ছিল তারা। তবে ১৯৭৩ সালে বিএনপি নামক দলটির জন্ম হয়নি। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন এ দল ১৯৮৯ সালে প্রথম সরকার গঠন করে। এরপর স্বৈরশাসকের পতনের পর ১৯৯১ সালে ৫ম সংসদ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করে। আর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুুন গঠিত সপ্তম ও ২০০৮ সালের নবম সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে দলটি।

আর দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভালো ফল ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। তাদের মনোনীত প্রার্থীরা মাত্র ৬টি আসনে ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম দুটি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ওই আটজন শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করেন। তবে নানা নাটকীয়তার পর বিজয়ীদের মধ্যে একমাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া সবাই শপথ নিয়েছেন। এখন সংসদীয় গ্রুপ গঠন ও সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদীয় গ্রুপ,বিএনপি,এমপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close