reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নাইক্ষ্যংছড়ি: আতঙ্কে ঘরছাড়া ৩ গ্রামের মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষ থামছেই না। দুই বাহিনীর গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে সীমান্তজুড়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া হচ্ছে গুলি ও মর্টার শেল। গুলির মুহুর্মুহু শব্দে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘর ছেড়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ। এরই মধ্যে দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা একটি মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হয়েছেন স্থানীয় জলপাইতলী গ্রামের গৃহবধূ ও এক রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হয় এক শিশুও।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতায় টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় এক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করেছে বিজিবি। এর আগে মিয়ানমার বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড গোলাগুলির মুখে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০৩ জন মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য।

চলমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে বসবাস করা মিয়ানমারের চাকমা জাতি ও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হচ্ছেন। তবে, বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা।

সোমবার মর্টার শেলের আঘাতে নিহতরা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু জলপাইতলী এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা (৫৫) ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮/ই এর ডি ব্লকের বাসিন্দা মৃত ধলু হোসেনের ছেলে নবী হোসেন (৬০)। আহত নুসরাত মনি (৬) স্থানীয় শহিদুল ইসলামের মেয়ে। নিহতরা চাষের জমিতে কাজ শেষে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য স্বাধীনের নামে সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আসছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি। প্রতিদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো কোনো এলাকায় চলছে দুই বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ। এরই মধ্যে আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখলের দাবি করেছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের চলমান সংঘর্ষে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন, উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তে বসবাসকারীদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে গোলাগুলির আতঙ্কে ইউনিয়নের তিন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। দুজন নিহত হওয়ার পর আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

মর্টার শেলের আঘাতে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি চললেও আমাদের দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে, সীমান্তে বসবাসকারীদের সরানোর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন বলতে পারবে।

টেকনাফ হোয়াইক্যং উলুবনিয়া এলাকার জালাল আহমেদ বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে মিয়ানমারের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ আমরা শুনতে পারছি। ভয়ে সীমান্ত থেকে লোকজন সরে যাচ্ছেন। অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ওপার থেকে রোহিঙ্গা ও বিজিপি সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেন এমন আশঙ্কায় সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সাগরে কোস্টগার্ড সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই আমরা রোহিঙ্গা কিংবা অন্য কাউকে ঢুকতে দেব না।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

৩৪ বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

বিজিবি কক্সবাজার রিজিওয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বলেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলা সংঘাতের কারণে আমরা সদর দপ্তরের অনুমতিক্রমে ১০৩ জন বিজিপি সদস্যকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের মিয়ানমার হস্তান্তর করার জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঘরছাড়া,আতঙ্ক,নাইক্ষ্যংছড়ি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close