গাজী শাহনেওয়াজ
ইভিএম প্রকল্প বাতিল, অস্বস্তিতে ইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ সংসদীয় আসনের অর্ধেকটিতেই আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট আয়োজনের উদ্যোগে সরকার সাড়া না দেয়ায় বড় ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর এ যন্ত্রে ভোট আয়োজনে চরম বিরোধীতা উপেক্ষা করে কঠোর ছিলো কমিশন; যার কারণে সাংবিধানিক সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের অস্বস্তিটা বেড়েছে। এখন বিদ্যমান ১ লাখ ৩০ হাজার ইভিএমে যতটা আসনে ভোট করা যায়, সেদিকে মনোযোগ ইসির। তবে অস্বস্তি কাটাতে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, - প্রস্তাবিত ইভিএম প্রকল্প বাতিল হলেও হতাশ নন তারা। এর আগে সরকার প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প বাতিল কারণের বিষয়ে স্পষ্ট করেন। বলেন, এই ধরণের প্রকল্প আয়বর্ধক নয়।
এ প্রসঙ্গে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আরও দুই লাখ ইভিএম কেনার বিষয়ে সায় দেয়নি সরকার। তবে, প্রকল্প স্থগিত হলেও তা নিয়ে হতাশার কিছু নেই। বিদ্যমান কার্যকর ইভিএম দিয়ে কত আসনে ভোট করা যাবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সিইসি বলেন, প্রকল্প স্থগিত হওয়ার পরে কমিশনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইভিএম প্রকল্পটি ইসির ভোট আয়োজনে কিছুটা ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এ কারণে যন্ত্রে ভোট আয়োজনের দিকে বেশি ঝোঁক ইসির। যার পরিপ্রেক্ষিতে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা সত্বেও ইভিএমে ভোট করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইসি। সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারও করা হয়। কিন্তু ফিডব্যাক আসবে না- এমন নতুন প্রকল্পের দিকে সরকারের মনোযোগ কম। কারণ বিশ^ব্যাপী চলছে চরম মন্দা। শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার পর পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার পথে হাটছে। এমনকি দাতা দেশগুলোও এ বিষয়ে সরকারকে বার বার সর্তক করছে। বলছে, ফিডব্যাক আসবে না- এমন প্রকল্পে তারা ঋণ দিতে রাজি নন। উল্টো বিভিন্ন প্রকল্পে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ফলে সরকারের জন্য আগামী নির্বাচনে ইভিএম প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও নতুন করে ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। মঙ্গলবার ডিসিদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২ লাখ নতুন ইভিএম কিনতে নির্বাচন কমিশনের ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব আপাতত অনুমোদন দেয়নি সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা ও কৃষিকে অগ্রাধিকার দিতেই ইভিএম প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর্থিক সংকটের জন্য ইভিএম প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে বলে বিরোধী দলের এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী এখন আর্থিক সংকট, এর মধ্যে আমরাও আছি। তবে এমন কোনো পর্যায়ে নেই যে কারণে আমরা চলতে পারবো না। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখাই প্রথম অগ্রাধিকার। এছাড়া মানুষের চিকিৎসা সেবা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো। এর জন্য যা লাগে আমরা তাই খরচ করবো। এসময় ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যেখানেই প্রকল্প নেওয়া হয়, সেখানে তা মানুষের জন্য কতটুকু কার্যকর ও উপকার হবে, এটি আপনাদের দেখতে হবে। যেখানে সেখানে প্রকল্প নেওয়া আমি পছন্দ করি না। আয়বর্ধক প্রকল্প নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের আগ পর্যন্ত আশাবাদী ছিল সরকার বিবেচনা করবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইভিএম প্রকল্প চূড়ান্তভাবে স্থগিত করায় কমিশনের মধ্যে অস্বস্তি চরমে বলে ইসির বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পিডিএস/এমএইউ