গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৬ মে, ২০১৯

ভোটার ডেটাবেইসের মিরর কপি যাচ্ছে আইসিটিতে

নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র হচ্ছে

দেশের সব নাগরিকের তথ্যের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামীতে নাগরিকদের তথ্যের ডেটাবেইস সরকারের কাছে থাকবে। এতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব নাগরিকের নির্ভুল তথ্য জানতে পারবেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার নাগরিকের তথ্য-সংবলিত ডেটাবেইস অবিকল (মিরর) স্থানান্তর হবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে।

সঠিক নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) সঙ্গে এখন পর্যন্ত শতাধিক সেবা সংস্থার চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক আছে, এখন অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইসির ডেটাবেইসে প্রবেশ করে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে থাকে। ইসি আশা করছে, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসির ডেটাবেইস শেয়ার হলে এর কলেবর ও ব্যহারের পরিধি বাড়বে। আগামীতে এ ব্যাপারে ইসির সঙ্গে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা হলে এই সার্ভিস নিতে সেবা গ্রহীতাদের আইসিটির ডেটাবেইসে ডুকতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তি ও কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে সভা হয়। ওই সভাতে এনআইডিসমৃদ্ধ ডেটাবেইসের হুবহু কপি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে স্পর্শকাতর বিষয়টির সুরাহ হবে তার কর্মপন্থা নির্ধারণে একটি টাস্কফোর্স গঠন হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। আর সদস্য রাখা হয়েছে এনআইডির কর্মকর্তা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা, এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তা, ওআরজি বিভাগের কর্মকর্তা ও বিসিসির একজন কর্মকর্তাকে।

কমিটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সেবাটি হস্তান্তর হলে আইন বিধিতে কী পরিবর্তন আনতে হবে এবং কর্মপরিধি কী হবে তা নির্ধারণে সুচিন্তিত মতামত বা সুপারিশ করবে। সুপারিশগুলো কমিশন সভায় আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভোটার ডেটাবেইসের মিরর কপি আইসিটি মন্ত্রণালয় নিচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি মৌখিক সম্মতিতে পৌঁছেছে দুটি (ইসি ও আইসিটি) সংস্থা বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, ভোটার সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন আইসিটি না ইসি করবে, এ নিয়ে দোলাচলে রয়েছে কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এনআইডিতে তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডির ডেটাবেইস তাদের অধীনে নিতে তৎপরতা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। এমনকি স্মার্টকার্ড প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সাবেক ওবারথু নামের সংস্থাটি ইসির ডেটাবেইসে প্রবেশের অনুমতি চেয়েও ব্যর্থ হয়।

এদিকে, নাগরিকের সঠিক তথ্য নিশ্চিতে আলাদা প্রকল্প নিয়েছে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় (ওআরজি), প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পর প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্মসনদটি সংগ্রহ করবে ওআরজি। প্রাইমারিতে ভর্তির সময় ওআরজির কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট শিশুকে ভর্তি করবে। এভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্যের আদান-প্রদান চলবে। পরবর্তী ওই শিশুটির বয়স আঠারো বছর হলে কমিশন তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের আইরিশ সংগ্রহ করে ডেটাবেইসে প্রবেশ করাবে। এভাবে নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যুর তথ্য সরকার জানতে পারবে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা তো এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো প্রাইমারি পর্যায়ে (টু আরলি টু টেল দ্যাট)। ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-যাচাই (ভেরিফিকেশন) প্রকৃতপক্ষে সরকারের একটা কাজ। যেহেতু ইসি নাগরিকের তথ্যটি সংগ্রহ করি এবং এ তথ্যের একটা গ্রহণযোগ্যতা (ক্রেডিবিলিটি) আছে। তাই এ কাজটি এত দিন সরকারের পক্ষে ইসি করত, এখন তারাই সেটি করবে।

তিনি বলেন, এনআইডির তত্বাবধানে যাচাই-বাছাই (ভেরিফিকেশন) হতো এর একটি মিরর বা হুবহু ডাটার তথ্য সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে থাকবে। এখন দেশের শতাধিক সংস্থার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের যুক্তির রয়েছে। এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর ওনাদের পলিসির অনুযায়ী চলবে। কারণ ভোটার নাগরিকের ডাটাবেইজটি নির্ভুল (অর্থেনটিন)।

সুতারং এই সার্ভিসটা নেওয়ার জন্য একটা প্রস্তাবনা আছে। আমরাই ওই আলোকে সামনের দিকে এগোচ্ছি। এখনো চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, কোন পন্থায় বা প্রক্রিয়াতে এটা হবে তার একটা কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে টাস্কর্ফোস গঠন হয়েছে। ওই কমিটির নৈতিক ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশ বা প্রস্তাবনার আলোকে কমিশন সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এনআইডির সেবাটির যাতে আরো পরিধি বাড়ে সেজন্য এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে, যোগ করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এই নির্বাচন কমিশনার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাগরিক নিরাপত্তা,নাগরিকের তথ্য,আইসিটি,নির্বাচন কমিশন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close