সম্পাদকীয়

  ১২ মার্চ, ২০২০

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন চাই

সংসদে আইন পাস হয়। তবে সে আইন বাস্তবায়নের কোনো ছাপ পড়ে না। আর সে কারণেই শুনতে হয়, সবই কাগুজে আইন। বিশেষ করে সড়ক পরিবহন আইনটি এর জীবন্ত উদাহরণ।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। আর বাস্তবায়ন শুরু হয় সংসদে পাস হওয়ার প্রায় এক বছর পর গত ১ নভেম্বর। কিন্তু শুরুতেই আইন প্রয়োগের বিষয়টিকে থমকে দাঁড়াতে হয়। মালিক-শ্রমিকের আন্দোলনের মুখে থমকে দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া সম্ভবত আর কোনো বিকল্প ছিল না সরকারের হাতে।

অনেকের মতে, সরকারকে দমন করার কৌশল মালিক-শ্রমিক পক্ষের সংগঠনগুলোর দক্ষতা আছে। সেই দক্ষতারই প্রতিফলন আমরা অবলোকন করছি প্রতিনিয়ত। আর এই থমকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে।

অপরদিকে গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়। তাদের মূল দায়িত্ব ছিল সড়কে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো। তবে এই টাস্কফোর্সের চলার গতি কচ্ছপের চেয়েও ধীর। এখন পর্যন্ত টাস্কফোর্স বৈঠক করেছে একটি। অগ্রগতির কথা না বলাই ভালো। ফলে সড়কে চালকরা বেপরোয়া চালাচ্ছেন যানবাহন। সম্প্রতি যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবগুলোর প্রকৃতি একই।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনায় এক শিক্ষিকার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষা সফরের বাসটি সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সাধারণ মানুষের ধারণা, এ দুর্ঘটনায় বাসের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চালক নিরাপদে থেকেছেন এবং থাকবেন। এদের কোনো শাস্তি হবে না। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। এদের খুঁটির জোরের কারণে এরা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। আইনের ঊর্ধ্বে। অন্তত বাস্তবতা সে কথাই বলছে।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ১১৮ জন। ২০১৯ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২২১ জন। ২০১৭ সালে ছিল ৭ হাজার ৮৫৫ জন। এতে দেখা যায়, বিগত সময়ের তুলনায় সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণা তথ্য মোতাবেক গত ২০ বছরে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশ ঘটে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালনার কারণে। তার পরও আমরা তাদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন আনতে পারিনি। পারিনি একটিমাত্র কারণে। আইনকেও কার্যকরী ভূমিকায় নামানোর ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতাই তাদেরকে বেপরোয়া করে তুলেছে।

আমরা মনে করি, একটি কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এ সমস্যার সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা সেই কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রইলাম।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সড়ক দুর্ঘটনা,সম্পাদকীয়,সড়কে শৃঙ্খলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close