সম্পাদকীয়

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২০

লিম্ফেডিমা রোগ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে

আরো একটি দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটতে চলেছে। অঞ্চলভিত্তিক এর নামও রয়েছে। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুলে যায়। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন নাম থাকলেও এর বৈজ্ঞানিক উচ্চারণ ‘লিম্ফেডিমা’। দেহের লসিকানালির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই এ রোগের আবির্ভাব। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের দেখা মিললেও তা এখনো ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। তবে আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে রংপুর বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকাশিত বুলেটিনের তথ্য বলছে, সারা দেশে এ রোগে মোট আক্রান্তের ৮৭ শতাংশই রংপুর বিভাগের সাত জেলার বাসিন্দা। একমাত্র গাইবান্ধা জেলায় এখন পর্যন্ত এ রোগের তেমন একটা প্রকোপ দেখা যায়নি।

তথ্যমতে, সারা দেশে মোট লিম্ফেডিমা রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু বেশি। অন্যদিকে রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা ছাড়া অন্য সাত জেলায় এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৮১। অর্থাৎ সারা দেশে আক্রান্তের ৮৭ শতাংশই রংপুর বিভাগে। এর মধ্যে শুধু রংপুর জেলাতেই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৩২। বিভাগটিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এভাবে কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দারিদ্র্যপ্রবণ বিভাগটির জেলাগুলোয় যেমন অপুষ্টির প্রকোপ রয়েছে; তেমনি স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাবও মারাত্মক। এ কারণে রংপুর বিভাগে লিম্ফেডিমার মতো রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

তথ্যমতে, এ রোগের কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই চিহ্নিত করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধ করা বর্তমান বাংলাদেশের জন্য খুব একটা কঠিন বলে বিবেচনায় আনা ঠিক হবে না। দেশের সাতটি বিভাগে এর তেমন কোনো লক্ষণ নেই। কেবল রংপুর বিভাগকেই শনাক্ত করা হয়েছে এবং এর উৎসের সন্ধানও পাওয়া গেছে। অতএব এর প্রথম প্রতিবিধান হচ্ছে রংপুর বিভাগকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রেলে উঠে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। ঠিক এমন একটা সময়ে একটি বিভাগ কেবল দারিদ্র্যতায় ভুগবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, বিভাগটিকে বিশেষ বিবেচনায় এনে উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করতে পারলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সে সিদ্ধান্ত নেবে- এটাই সমাজের প্রত্যাশা। এ দেশে আমরা সমঅধিকার এবং একে অপরের স্বজন হিসেবে বসবাস করতে চাই। রাষ্ট্র এবং সরকার সে ব্যবস্থা করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতির জনক আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবলেও তা দিয়ে যেতে পারেননি। জাতির জনকের সেই স্বপ্ন এবং অসমাপ্ত কাজকে আমরা এগিয়ে নিয়ে মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির সোপানে নিয়ে দাঁড় করাব। আগামী দিনে এটিই আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ।

আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আমাদের চিন্তা ও চেতনার মাঝে দোলাচলের জন্ম দেয়। আমরা নতুন করে স্বপ্নাবিষ্ট হই। নতুন এক মর্যাদাবান বাংলাদেশ দেখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উন্নয়নের গতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস অর্জন করি। রাষ্ট্রের কাছে আমরা চাইতেই পারি। কেননা, আমরা রাষ্ট্রেরই সন্তান। এ মুহূর্তে আমরা চাইব, রংপুরের উন্নয়নকে কিছুটা হলেও বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হোক।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লিম্ফেডিমা,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close