reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রাজকীয় বন্দিশালায় কেমন ছিলেন সৌদি প্রিন্স

দুর্নীতি দমনের নামে কোটিপতি ব্যবসায়ী সৌদি প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালকে গত বছর নভেম্বরের শুরুতে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে আটকে রাখা হলে বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। পশ্চিমের দেশগুলোতে বেশ পরিচিত এ ব্যবসায়ীকে কেন আটক করা হয়েছে এবং কী অবস্থায় রাখা হয়েছে-সেটা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়।

সৌদি আরবের নতুন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে রাজকীয় ডিক্রি জারি করে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেন। কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, সন্দেহভাজনদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তারা প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে যা কাজে দেবে।

ওই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে পাঁচ তারকা রিটজ কার্লটন হোটেলকে রাজকীয় বন্দিশালায় পরিণত করে সেখানেই দেশটির কয়েক ডজন প্রিন্স, সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও ধনী ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৪০০ ধনাঢ্যকে আটকে রাখার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ বছর জানুয়ারির শেষদিকে কানাডার এক ব্যবসায়ী বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলওয়ালিদকে পাঁচ তারকা হোটেলে নয় বরং বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি অনলাইনে একটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে প্রিন্স আলওয়ালিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই কথোপকথনের সময় আমার মনে হয়েছে, সৌদি প্রিন্স পাঁচ তারকা হোটেলে নয় বরং বন্দিশালায় অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা হোটেলকে বন্দিশালায় রূপান্তরিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে রিটজে গিয়ে স্বচক্ষে প্রিন্স আলওয়ালিদের অবস্থা দেখার আমন্ত্রণ জানান। তার কয়েক ঘণ্টা পরই রয়টার্সের প্রতিবেদক কেটি পলের সঙ্গে আলওয়ালিদের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি ঠিক হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি রাত ১টায় সরকারি গাড়ি পলকে তুলে নিয়ে রিটজের বিশাল ফটকের সামনে হাজির করে। ‘আমি তিনমাসের মধ্যে প্রথমবার রিটজের প্রধান ফটকটি খোলা দেখতে পেলাম’-বলেন পল। কিছু সময় অপেক্ষা ও পায়চারি করার পর তাকে ছয় তলায় প্রিন্সের বিলাসবহুল কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, আলওয়ালিদ যেখানে অপেক্ষা করছিলেন।

প্রিন্সের কক্ষের বাইরে হোটেলের কোনো ছবি বা ভিডিও নিতে নিষেধাজ্ঞার কথা জানালেও সাক্ষাৎকারের সময় এ ধরনের কোনো শর্ত দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পলকে স্বাগত জানানোর সময় প্রিন্সকে প্রাণোচ্ছ্বল দেখাচ্ছিল, তিনি সাক্ষাৎকারের সময় ছবি তোলা এবং ভিডিও করার অনুমতিও দেন। সরকারি কর্মকর্তারা এরপর প্রিন্সের সঙ্গে রয়টার্সের প্রতিবেদককে রেখে কক্ষ ছেড়ে চলে যান। দুজন প্রায় ২৫ মিনিট একান্তে আলোচনা করেন।

সাক্ষাৎকারে প্রিন্স জানান, রিটজে অবস্থানকালে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করা হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব এ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার, ঘুষ ও কর্মকর্তাদের ওপর বলপ্রয়োগের অভিযোগ আনা হতে পারে বলে এক সৌদি কর্মকর্তা এর আগে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন।

সাক্ষাৎকারে আলওয়ালিদ কোনো ধরণের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নির্দোষ এবং সহজেই এখান থেকে বের হয়ে যাবেন। সম্পদ এবং কোম্পানি কিংডম হোল্ডিংয়ের উপরও তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কোটিপতি ব্যবসায়ী। আলওয়ালিদ খোলা মনেই এসব বলছিলেন, নাকি বিচারবহির্ভূত আটকাদেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি এসব বলেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় ছিল না, বলেন পল। তাকে শীর্ণ দেখাচ্ছিল, যদিও তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী ও সতেজ। বিলাসবহুল কামরাগুলো ঘুরে দেখানোর সময় তিনি এমনকী আমার সঙ্গে কৌতুক করছিলেন, দুজনের একসঙ্গে ছবি তুলতেও জোর করেছিলেন তিনি।

পল জানান, তার আইফোনেই তিনি দ্জুনের কথোপকথন রেকর্ড করেন। আলওয়ালিদের ডেস্কে ওই সময় স্বর্ণের টিস্যু বক্স ও পানির বোতল ছিল। সাক্ষাৎকারের কয়েক ঘণ্টা পরই প্রিন্স মুক্তি পান, যদিও তার মুক্তির শর্তাদি স্পষ্ট নয় বলে রয়টার্সের তখনকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সৌদি প্রিন্স,প্রিন্স আলওয়ালিদ,সৌদি আরব,দুর্নীতি দমন অভিযান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist