সাইদুল করিম মিন্টু

  ২৯ মে, ২০২০

করোনা মোকাবিলায় জাগ্রত তরুণ প্রজন্ম

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে স্থবির পুরো পৃথিবী। যার উৎপত্তি চীনের উহানে হলেও দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও। গত ৮ মার্চ দেশে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। তারপর থেকে জ্যামিতিক আকারে এই ভাইরাসের মাত্রা বাড়তে থাকে। সরকার অঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করে। এতে গরিব, অসহায়, হতদরিদ্র, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন।

এদিকে কর্মহীন মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ১০ টাকা কেজি চালের ব্যবস্থা করে। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে সারা দেশে টিসিবির পণ্যের বিক্রি শুরু হয়। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশের এই ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার দ্বারা ৫০ লাখ হতদরিদ্র সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন; যা একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই সম্ভব। অতিদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মাঝে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের তরুণ সমাজ এগিয়ে এসেছে। কখনো মানুষকে সচেতন করা, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে করণীয়, জীবাণুনাশক স্প্রে করেছে। আবার কখনো রাতের আঁধারে বা দিনের আলোয় কর্মহীন, হতদরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের দোরগোড়ায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের তরুণ-যুবকরা জীবনের মায়া ত্যাগ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে আমরা মাত্র ৯ মাসে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। এখন আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম, যুবসমাজ জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে করোনাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য কাজ করছে। আত্মমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কয়েকটা সংবাদ তুলে ধরা হলো :

১. আপনি থাকুন ঘরে, আমরা আসছি আপনার দরজায় এমন স্লোগানে মার্চের শেষ সপ্তাহে কাজ শুরু করেন ছয় বাল্যবন্ধু। তাদের মধ্যে আছেন আইনজীবী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার। প্রবাসীও আছেন দুজন। করোনাকালের সংকট মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে রাতের আঁধারে তারা পৌঁছে দেন অসহায় মানুষের ঘরে। এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে নিজেদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এ সহায়তা দিয়েছেন তারা। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে একই নিয়মে প্রতি মাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলেও জানা গেছে।

২. ওরা ১২ জন। পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তারা স্বেচ্ছাসেবী একটি গ্রুপ। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চাকরি করেন, কেউ করেন ছোটখাটো ব্যবসা। আবার কেউ এখনো ছাত্র। প্রতাপ দাস লেন, গোপাল সাহা লেন আর পিসি ব্যানার্জি লেনসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন লেনের বাসিন্দাদের আপদে-বিপদে তারা পাশে থাকেন। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজেও নিজেদের সম্পৃক্ত রাখেন। এলাকার রাস্তায় পানি জমলে ড্রেন পরিষ্কার করেন। কানাগলিতে রিকশার জট লাগলে ছাড়াতে আসেন তারা। করোনাভাইরাসের চলমান এই সংকটে ১২ জনের এ গ্রুপটি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটে চলছে অলিগলিতে। দুস্থ ও অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে খাবার। খবর পেলে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছে নি¤œ আয়ের মানুষের ঘরে। কেউ আবার বাজার থেকে খাদ্য কিনিয়ে নিচ্ছেন তাদের দিয়ে। নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবায় ওরা নিবেদিত। ৩. নড়াইলে ঊষার আলো সমাজকল্যাণ সংঘ। যারা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকে মানুষকে সচেতন করা, জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোর কাজ করেছে। এছাড়া সংগঠনটির উদ্যোগে পথচারী, দোকানি ও এতিম শিশুদের মাঝে ইফতারি বিতরণ করেছে।

আমি উল্লিখিত তিনটা সংবাদের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কার্যক্রম তুলে ধরলাম। তবে সারা দেশে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করছে, যা আমাদের এই সংকটে তাদের ভূমিকা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তাছাড়া দেশের সবচেয়ে আলোচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের কথা বলতে পারি। তারা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগের থেকেই এক টাকায় আহার কার্যক্রম পরিচালনা করে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়া এই সংকটকালীন মুহূর্তে তারা নিবেদিতভাবে কাজ করছে। তাছাড়া পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যারা দেশের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাসিক, এককালীন বৃত্তির ব্যবস্থাসহ যেকোনো বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই সংকটকালীন অবস্থায়ও তারা ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তারদের পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুভমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের ধানকাটার জন্য ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছিল। আমার ছাত্রলীগের ভাইরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সারা দেশে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। আবার মাড়াই করে ঘরেও তুলে দিয়েছেন। এই তরুণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খাদ্যদ্রব্যও বিতরণ করছে।

এছাড়া আমরা ঝিনাইদহের তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনা স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি। যারা ২৪ ঘণ্টা মানুষের সেবায় কাজ করছে। এমনকি তারা নিজের বাড়িতে না গিয়ে পৌরসভার কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করে। তাদের উদ্যোগে শহরের নিয়মিত সচেতনা কর্মসূচি, জীবণুনাশক স্প্রে করা হয়। গোপন রহি গভীর প্রাণে, আমাকে বলো কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তাছাড়া আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িতে খোঁজখবর নেওয়া, করোনা আক্রান্ত রোগীদের উপহারসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।

দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের মনন মেধা জাগ্রত করে মানুষের সেবায় কাজ করছে। যা দেশের এই সংকট মোকাবিলায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রত্যাশা করি, সরকারসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। আবার দেশের মানুষের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্যের ফিরে আসবে। তখন আমরা সবাই মিলে করোনা বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠব।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

Email: [email protected]

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা মোকাবিলা,করোনাভাইরাস,করোনা সহায়তা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close