reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

চেয়ারম্যানের রোষানলে ৬ মাস কারাগারে ২ সৌদি প্রবাসী

কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমের রোষানলে পড়ে অস্ত্র ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার আসামি হয়ে গত সাড়ে ৬ মাস ধরে কারাগারে বদিউল আলম ও মোঃ কাবুল নামের সৌদি ফেরত দুই প্রবাসী। অভিযোগ রয়েছে, ১৪ মে দিবাগত রাতে রামু থানার পুলিশকে বশে এনে তাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ১৭ মে ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা দিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলে সেই থেকে কারাগারে রয়েছে তারা। বর্তমানে এদের পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পুলিশের আইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে ওই দুই প্রবাসীর পরিবার।

বুধবার পুলিশের আইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়েকৃত অভিযোগে জানা যায়, রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের সাথে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে জমি জমা, ব্যবসার লেনদেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জের নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনোরকম প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদী লোকজনকে বিভিন্ন মামলায় জড়াবে, খুন করবে, খুন শেষে লাশ গুম করবে এইরকম ভয়ভীতি প্রর্দশন করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মে দিবাগত রাতে রামু থানার পুলিশ এলাকার মৃত জেবর মুল্লুকের ছেলে সৌদি ফেরত বদিউল আলম (২৮) ও সুলতান আহমদ এর ছেলে সৌদি ফেরত মোঃ কাবুল (৩৫) কে কোনরকম মামলা মোকদ্দমা ছাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।

প্রবাসী মোঃ কাবুলের স্ত্রী হামিদা বেগম ও বদিউল আলমের ভাই শফিউল আলম জানান, অনেক খোঁজাখুজির পর তাদেরকে রামু থানার হাজতে আটক রাখার খবর পাই। বিনা কারণে ১৭ মে সকাল পর্যন্ত তাদেরকে রামু থানায় আটক রেখে গত ১৬ মে রশিদনগর কারিগরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণ করছে মর্মে ঘটনা সাজিয়ে রামু থানার সাবেক ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, এসআই আবুল কালাম আজাদ (সেকেন্ড অফিসার), এসআই মোঃ মুকিবুল, এসআই মোঃ বিল্লাল হোসেন, এসআই মোঃ মোতাহের হোসেন দুটি মামলা সাজান।

তারা আরো অভিযোগ করেন, পুলিশ কর্তৃক আটককৃত নিরপরাধ ২ জনসহ অপর আরও ৭ জনকে পলাতক আসামি দেখিয়ে ডাকাতি প্রস্তুতি ও অস্ত্র মামলায় অর্ন্তভুক্ত করে। উদ্ধার দেখান- ১টি দেশীয় তৈরি পাইপ গান ও ২ রাউন্ড কাতুর্জ। মামলা নং- ২১/১৫৬ ও ২২/১৫৭ তাং- ১৬/০৫/২০১৭ইং। পরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

তারা আরো অভিযোগ করেন, থানার পুলিশ সদস্যরা মোটা অংকের টাকা দাবি করে এবং টাকা দিলে ওই দুইজনকে ছেড়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করে।

তারা জানায়, টাকা যোগাড় করতে না পারায় ক্ষিপ্ত হন সাবেক ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। ১৫ মে তারা পুনঃরায় কিছু টাকা নিয়ে থানায় গেলে উক্ত সময়ে অতিরিক্ত ডিআইজি কুসুম দেওয়ান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল গোলাম রুহুল কুদ্দুস রামু থানা পরিদর্শনের অজুহাত দেখিয়ে ওইদিন আটক বদিউল আলম ও মোঃ কাবুলকে ছেড়ে দেয়নি।

লিখিত আবেদনে তারা পুলিশের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ১৪ মে রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ১৭ মে সকাল ১০ টা পর্যন্ত থানার হাজত খানায় আটক থাকা দুই প্রবাসী কিভাবে ১৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় রশিদ নগরস্থ ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজ নামক স্থানে ডাকাতি প্রস্তুতি গ্রহন করতে পারে?। আটক রাখার ঘটনাটি থানার হাজতখানায় আসামি লক-আপ রেজিষ্ট্রার তদন্ত করলে এবং উক্ত সময়ে থানায় রক্ষিত সিসি ক্যামরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে তদন্ত করলেই এর প্রমান মিলবে।

তারা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আলমের সাথে মোঃ কাবুলের বন্ধুত্বের সুবাধে দুজনই ব্যবসা বানিজ্য করে আসছিল। তার দুইজনের মধ্যে ব্যবসার হিসাব নিকাশ নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ার কারণে চেয়ারম্যান এর সাথে ব্যবসার হিসাব নিকাশ শেষ না হতেই এক পর্যায়ে ওই চেয়ারম্যান রশিদনগর এলাকার ক্রীড়া ও কারিগরী কলেজের পাশের মোঃ কাবুলের পিতার ২০ শতক স্বত্ব দখলীয় জমি চেয়ারম্যান জোর পূর্বক দখল করে। এই জমি জোর করে অন্য ব্যক্তিকে বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান ও মোঃ কাবুলের মধ্যে বাকবিতন্ডাসহ দ্বন্ধ হয়। মোঃ কাবুলকে ঘায়েল করার জন্য রামু থানার উল্লেখিত পুলিশ সদস্যদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে সাজানো ঘটনা দেখিয়ে জঘন্যতম মিথ্যা মামলা দুটি রুজু করেন।

স্থায়ী বাসিন্দা ও মামলার দুটির আসামিদ্বয়ের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, গত প্রায় ১ বছর যাবত রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার বেপরোয়া ক্ষমতা ও দাপটের মাধ্যমে তার ও তার পোষ্য বাহিনীর নির্যাতনে রশিদ নগরের সাধারণ জনগণ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষদেরকে বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে তার অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নসহ বিভিন্ন হয়রানি মূলক মামলায় জেল, জুলুম ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তার এহেন কর্মকান্ডে এবং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চৌকিদার ও দফাদারদের মাধ্যমে এলাকার অনেক মহিলার শ্লীলতাহানি সহ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক রামু থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাসহ ঘটনার নেপথ্যে ইন্ধন দাতা চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় এনে মিথ্যা মামলার শিকার নিরীহ কারান্তরীন দুইজনকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানানো হয় আবেদনগুলোতে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চেয়ারম্যান,রোষানল,৬ মাস কারাগার,২ সৌদি প্রবাসী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist