বাসস

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কমনওয়েলথ দেশের সহযোগিতার আহ্বান

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় ১২তম কমনওয়েলথ মহিলাবিষয়ক মন্ত্রীদের সম্মেলনের একটি সেশনে বক্তৃতাকালে তিনি এই আহ্বান জানান।

এর আগে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার পক্ষে কেনিয়ার পাবলিক সার্ভিস, যুব ও জেন্ডারবিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক মার্গারেট কবিয়া এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ১২তম এ সম্মেলনের আয়োজক দেশ কেনিয়া।

ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ নারী ও শিশু। কমনওয়েলথ নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোসহ তাদের জীবন মানোন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক মিলিয়নের বেশিও (প্রায় ১১ লাখ) মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে রেখে কমনওয়েলথভুক্ত দেশে এসডিজির ৫ নম্বর গোলের প্রকৃত অর্জন সম্ভব হবে না। কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের মহিলাবিষয়ক মন্ত্রিদের সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন ইন্দিরা বলেন, সংবিধানের আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০, জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি-২০১১, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ২০৩০, ও ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ সালে ১৮ বছরের নিচে মেয়ে শিশুর বাল্যবিয়ের হার ছিল ৭৪ শতাংশ, তা ২০১৭ সালে কমে ৪৭ শতাংশ হয়েছে। আর ১৫ বছরের নিচে মেয়ে শিশুর বাল্যবিয়ের হার ৩২ শতাংশ থেকে কমে ২০১৭ সালে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০৪১ সালে বাল্যবিয়ের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেট প্রণয়ন করছে। বর্তমানে ৪৩টি মন্ত্রণালয় এ বাজেট করছে, যা মোট বাজেটের ৩১ শতাংশ। সরকার সারা দেশে প্রায় ৭ হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করছে। নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বিকাশমান দেশগুলোর একটি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, সরকার যুগোপযোগী বিভিন্ন নীতি, কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশে জেন্ডার বৈষম্য যেমন কমেছে, তেমনি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচক ও মাপকাঠিতে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদনের হিসাব, ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম, ২০১৮ সালে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী ও সংসদীয় উপনেতা নারী যা বিশ্বে অনন্য উদাহরণ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সহিংসতার শিকার নারি ও শিশুদের জন্য ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল স্থাপন করা হয়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের পুষ্টির জন্য মা ও শিশু সহায়তা নামে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সম্মেলনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার সিনিয়র অফিসিয়ালদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কমনওয়েলথ উইমেন বিজনেস ফোরাম, আইন পর্যালোচনা কমিটিসহ বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ১৭ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী এই কমনওয়েলথ মহিলাবিষয়ক মন্ত্রীদের সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close