তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

ইয়াবা পাচারে পালটাচ্ছে কৌশল, হোতারা অধরা

ইয়াবা পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষাপটে প্রতিনিয়তই কৌশল পালটাচ্ছে পাচারকারীরা। এতে তাদের ধরতে অনেক সময় বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আর বহনকারীরা ধরা পড়লেও হোতারা থাকছে পর্দার অন্তরালে। এসব মাদক বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার।

সর্বশেষ গত সোমবার নগরীর বন্দর থানাধীন নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা। এ সময় একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়। এর আগের দিন এক দম্পতি ও দুই রোহিঙ্গা নারী থেকে সাড়ে তিন হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। একই দিন সকালে কর্ণফুলী সেতুর গোল চত্বর থেকে ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মো. রেজাউল করিম সরদার প্রকাশ শান্ত (৪০) নামে এক কথিত সাংবাদিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দেশে সরবরাহ হচ্ছে। প্রতিদিনই ইয়াবা পাচার হচ্ছে। আবার প্রতিদিনই ধরাও পড়ছে। কিন্তু পাচারের তুলনায় জব্দ হচ্ছে খুব কম। গত বছরের ৪ মে নগরীর হালিশহরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ দুই ভাইকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই বছরের ১৫ এপ্রিল পতেঙ্গাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলার থেকে ২০ লাখ ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছিল র?্যাব। একই দিন নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার একটি বাড়ি থেকে ইয়াবা পাচারের মূল হোতা মোজাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত র?্যাব অভিযান চালিয়ে ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, অপরাধীরা একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করছে। তবে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালানোর পথ নেই। র‌্যাব-৭-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাশকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট রয়েছে। আমরা সজাগ রয়েছি। বহনকারীরা ধরাও পড়ছে।’

এদিকে ২০১৮ সালের শেষের দিকে মাদকের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চিহ্নিত অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হলে জড়িতরা এলাকা ছাড়ে। ব্যবসা ও পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অভিযান গতি হারায়।

এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইয়াবা পাচার রোধে মিয়ানমারের কাছে বারবার সহযোগিতা চাইলেও তারা সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না।

অনুসন্ধান বলছে, দেশের সর্বশেষ সীমান্ত টেকনাফ থেকে ইয়াবা চট্টগ্রামে ঢুকছে। এখান থেকে হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। এর পেছনে সরকারদলীয় নামধারী কিছু অসৎ লোক ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার হাত রয়েছে। বিশেষ অভিযানে মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা থাকছে অধরা। টেকনাফ উখিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে তিনি ইয়াবার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। তিনি ইয়াবা পাচারকারীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমানে খুবই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইয়াবা পাচারকারীরা। তারা সরাসরি গন্তব্যে না গিয়ে কয়েকবার গাাড়ি বদল করে। প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির সিনিয়র পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বহনকারীদের দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। শরীরে তল্লাশি করেও কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাদের ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কল্পনাকেও হার মানায়। নারী মাদক পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে ইয়াবা বহন করছে, যা রীতিমতো বেকায়দায় ফেলে পুলিশকেও।

নিষিদ্ধ ইয়াবা পাচারে শরীরের গোপন স্থান, ফল-সবজির আড়ালে কিংবা দুধের কৌটা থেকে জুতার সুখতলা কোনো কৌশলই বাদ রাখছে না পাচারকারীরা। কখনো কখনো সাংবাদিক-পুলিশ পরিচয়ে ইয়াবা পাচার করা হয়। বের করছে নতুন নতুন রুট। এ ছাড়া কাঁচা সুপারি, বইয়ের ভেতর, চশমার বাক্সের ভেতর, জিআই পাইপের ভেতর, পুরুষের মলদ্বার ও মহিলার শরীরের নানা জায়গা থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, কিছু পাচারকারী ধরা পড়লেও অনেক ইয়াবা পাচারের চালান পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close