বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

বেড়ায় উন্মুক্ত স্থানে কয়লা বিক্রি স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিতে

পাবনার বেড়া উপজেলার নড়রবাড়ীতে পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি করে উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা এ কয়লা কার্গো জাহাজে করে নগরবাড়ী নৌবন্দরে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। শত শত শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাথায় করে এ কয়লা বহন করছে। এতে কয়লার গুড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসে ঢুকে পড়ছে শ্রমিকদের শরীরে। ফলে তারা ক্যান্সারসহ যক্ষা রোগের ঝুঁকি বহন করছে বলে অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ভাটাতে ইট পুড়াতে কয়লা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটন কয়লা ছয় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরবাড়ীতে সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, নওয়াপাড়া ট্রেডার্সসহ সাতজন কয়লা ব্যবসায়ী রয়েছে এখানে। যশোরের নওয়াপাড়া গ্রুপ এ কয়লা আমদানী করে থাকে। তারা ইন্দোনেশিয়া থেকে জাহাজে করে চিটাগাং নিয়ে আসে। সেখান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে নগরবাড়ীতে উন্মুক্তভাবে বিক্রি করছে। লোড-আনলোডের সময় ছাড়াও স্তুূপকৃত কয়লার গুড়ো বাতাসে মিশ্রিত হয়ে পার্শ্ববর্তী ফসলী জমিতে পড়ছে। নগরবাড়ীর নদীপাড়ের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, কয়লার ডাষ্টে জমির মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে। এ জমিতে ফসল আবাদ করে কাঙ্খিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজাহার আলী বলেন, ‘জমিতে কয়লার স্তর পড়লে ফসল কম হবে। কারণ মাটি ঠিকমত প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহন করতে অন্তরায় সৃষ্টি হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নিয়ে নিয়ম অনুয়ায়ী সংরক্ষিত এলাকায় এ ব্যবসা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।’

নগরবাড়ীর কয়লা ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ আছে। তবে সেটা তারা উপস্থাপন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। শ্রমিকেরা জীবনের ঝুকি নিয়ে কয়লা বহন করছে তাদের মাউস নেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, সেটা তাদের বিষয়।

কয়লা শ্রমিক জালাল উদ্দিন জানান, প্রতিটন কয়লা মাথায় করে পরিবহন করার জন্য চুক্তি করা হয়। প্রতিদিন দুই-তিনটন কয়লা বহন করে থাকেন। এতে গড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০টাকা হাজিরা পান। কয়লা শ্রমিক আল আমীন, হাতেম আলী, হাজেরা খাতুন ও তার সঙ্গীরা বলেন, কয়লা বহনে যক্ষা রোগ হতে পারে সেটা তারা জানে না। অভাবের তাড়নায় ঘাটে শ্রম বিক্রি করতে আসেন।

যক্ষাব্যাধি (টিবি) বিষেজ্ঞ ডা. মাসুদুর রহমান জানান, ধুলা বালি বা যেকোন দ্রব্যের ডাষ্ঠ নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে গিয়ে আটকা পড়ে। ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ঠের পাশাপাশি কাশি শুরু হয়ে থাকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেটা যক্ষার রুপ ধারন করে। যক্ষা রোগের চিকিৎসা সেবায় যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও গনসচেতনতার অভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এ ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close