ইউনুস আহমেদ

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

কাট্টুস নামের বন্ধুটি

বাড়ির পেছনেই বাগান। হরেকরকম গাছ সেই বাগানে। ফলের গাছই বেশি। আম, জাম, লিচু, পেয়ারা থেকে শুরু করে কদবেল পর্যন্ত। একপাশে ছোট্ট বাঁশঝাড়। লিকলিকে লম্বা বাঁশগুলো মনে হয় আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। বাগানের সামনে বড় টিনের ঘর। দুটি কক্ষ। একটিতে বাবা মা থাকে। আরেকটিতে লিয়া আর লিটু থাকে। ওরা ভাইবোন। লিয়া বড় আর লিটু ছোট। ওদের এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। স্কুলে না গেলে কী হবে ওদের দুরন্তপনা থেমে নেই। বাড়ির পেছনের এই বাগানটাই ওদের খেলার প্রিয় জায়গা। একটু সময় পেলেই দৌড়ে চলে যায় বাগানে। মাঝে মধ্যে ভয়ও করে লিয়ার। বেশ ঘন গাছপালা। বাবা যখন বাগানে আসেন তখন লিয়ার খুব ভালো লাগে। তখন আর ভয় করে না। একদিন দুপুর বেলায় লিয়া বাগানে গিয়ে বেশ অবাক হলো। কী একটা যেন সড়সড় করে পাতার আড়াল হয়ে গেল। লিয়া ভালো করে খেয়াল করল। কাঠবিড়ালির ছানা! এক কাঠবিড়ালির ছানা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাগানে। গাছ থেকে গাছে। এই ডাল থেকে ওই ডালে। খুব সুন্দর কাঠবিড়ালির ছানাটি। বাদামি রঙের। পিঠ বরাবর লম্বা সাদা কালো ডোরা। লম্বা একটা লেজ। চোখ দুটি যেন মার্বেলের কালো পাথর, চকচক করছে। খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। লিয়ার দিকে খুব অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। যেন লিয়াকে ভালো করে দেখছে। ভাবখানা এই, আমার বাগানে তুমি কে প্রবেশ করেছ হে? এরপর যেন লিয়াকে দেখানোর জন্যই আমগাছ থেকে লাফিয়ে গিয়ে পড়ল পেয়ারা গাছে। পাকা পাকা পেয়ারা গাছে ঝুলছে। টপাটপ খেয়ে সাবাড় করছে। বাড়ির মালিক কাউকে কোনো ফল ছুঁতেও দেয় না। অথচ দুষ্টু কাঠবিড়ালির ছানাটি একাই সব খেয়ে সাবাড় করছে। বাড়ির মালিক কাঠবিড়ালির ছানাটিকে তো কিছু বলছে না। লিয়া হঠাৎ বলে উঠল, কাঠবিড়ালি, ও কাঠবিড়ালি তোমার নাম কী? উত্তর না দিয়ে কাঠবিড়ালির ছানাটি লাফিয়ে আরেক পেয়ারার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এবার লিয়া বলল, ও তুমি কথা বলবে না, ঠিক আছে, আমি তোমার নাম দিলাম, কাট্টুস। কারণ তুমি কুটকুট করে সব পেয়ারা একাই খেয়ে নিচ্ছ। আমাকে একটাও দিচ্ছ না। এদিকে কাট্টুস কিছুই বলছে না। সে একমনে খেয়েই চলেছে। পেয়ারাগুলো নিশ্চয়ই অনেক মজা। উজ্জ্বল সূর্যের আলোয় পেয়ারাগুলো সবে পাকতে শুরু করেছে। ডাসা ডাসা পেয়ারা। এতদিন সে পেয়ারাগুলো দেখে রেখেছিল। লিয়া বেশ অস্থির হয়ে পড়ল। হঠাৎ একটা পেয়ারা নিচে পড়ল। লিয়া দৌড়ে গেল। তুলে নিয়ে দেখল টসটসে পাকা একটা পেয়ারা। লিয়া খুব খুশি হলো। সে বলল, কাট্টুস, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, পেয়ারাটি আমাকে দেওয়ার জন্য। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। এরপর থেকে কাট্টুস লিয়ার বন্ধুটি হয়ে গেল। বাগানে এসেই কাট্টুসের দেখা মেলে। অথবা লিয়ার শব্দ পেলেই কাট্টুস পাতার আড়াল থেকে বের হয়ে আসে। লাফালাফি শুরু করে দেয়। দুজনে বেশ গল্প চলতে থাকে। গল্পটি অবশ্য চলে এক তরফা, মানে শুধু লিয়ার তরফ থেকে। সে একাই বকবক করতে থাকে। আর ওদিকে কাট্টুস পেয়ারা খেতেই থাকে। মাঝে মধ্যে মুখ তোলে লিয়ার দিকে একটু তাকায়। লিয়া তাতেই খুশি। লিয়া মাঝেমধ্যে ভাবে ইস্ যদি কাট্টুসের মতো হওয়া যেত। তবে কতই না মজা হতো। এই গাছ থেকে ওই গাছে, গাছের এই ডাল থেকে ওই ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়া যেত। গাছের মগডালের মিষ্টি ফলগুলো অনায়াসেই খাওয়া যেত। এক দিন বাবা বাগানে এসে দেখলেন তার মেয়ে লিয়া গাছের দিকে তাকিয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। বাবা বললেন, মা, তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ? ‘ওই যে বাবা, কাঠবিড়ালি।’ অঙ্গুলি নির্দেশ করে লিয়া দেখাল। লিয়ার বাবা বললেন, ‘ও, কাঠবিড়ালির ছানা?’ ‘হ্যাঁ, বাবা ওটাইতো আমার বন্ধু। আমি ওর নাম দিয়েছি কাট্টুস।’ লিয়ার কথা শুনে বাবা হাসলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist