মো. জাহাঙ্গীর আলম
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি
আবদুর রহমান আমাদের প্রিয় শিক্ষক। আজ ক্লাসে ঢুকে চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সবাই স্যারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বললাম, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন শ্রদ্ধেয় স্যার? আলহামদুলিল্লাহ্? আমি খুব ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ্? আমরাও ভালো আছি স্যার। স্যার হাজিরা খাতা বের করে নাম ডাকা শুরু করলেন। রোল নাম্বার এক রাসেল। রাসেল বলল, ইয়েস স্যার। রাহাত বলল, স্যার আজ আমি একটা কথা বলি। স্যার, বল বাবা। স্যার, আজকে সবাইকে বাংলায় জবাব দিতে হবে। কারণ বলতে না বলতেই আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার বলতে শুরু করলেন, আজ থেকে শুরু ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। বাংলা ভাষার মাস! এ মাসেই আমরা এক সাগর বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা কিনে এনেছি। এঁকেছি বর্ণমালার নতুন ছবি! পেয়েছি লক্ষ মায়ের বুকভরা আশা ও ভালোবাসা স্নেহ মায়ায় ঘেরা মাতৃভাষা বাংলাভাষা। শ্রদ্ধেয় আবদুর রহমান স্যারের কথা শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই এবং একে অপরের দিকে তাকালাম। আমাদের মনেই ছিল না যে, আজ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন। শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান স্যার একটি কবিতার অংশ পড়ে শুনালেন এভাবে।
বাংলাভাষা মায়ের আশা
পূরণ করতে চাই,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে
মরতে পারি ভাই।
সালাম রফিক জব্বারেরা
করল জীবন দান,
তাইতো বাংলা বিশ্বজুড়ে
চেতনার জয়গান।
শ্রদ্ধেয় স্যারের কবিতার অংশটুকু শুনে আমরা বিস্মিত হলাম। স্যার বললেন, আজ শুধু গল্প করব। একুশের গল্প, বাংলাভাষার গল্প। আমরা সবাই বললাম, স্যার আজ তাই হবে। কারণ আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাভাষা। আমাদের বাংলাভাষার ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে পাকিস্তান সেনারা কী নির্মমভাবে আমাদের মায়ের ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান স্যার বলতে শুরু করলেন বায়ান্নর ইতিহাস! বাংলাভাষার জন্য কী বিরলভাবে অকাতরে জীবন ঢেলে দেওয়ার ইতিহাস। স্যারের কথা শুনে সাহসে আমরা সবাই তেজদৃপ্ত হয়ে উঠছি। মনে হচ্ছে শফিক, রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের সঙ্গে আমরাও ছিলাম সেই বায়ান্নর মিছিলে। স্লোগান আমরি বাংলাভাষা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।
একুশের মিছিলে বাংলা তরুণ ছাত্রসমাজ ঢাকার রাজপথে নামে মায়ের ভাষা বাংলাভাষা রক্ষা করতে। ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। অসংখ্য ছাত্র শার্টের বোতাম খুলে দিয়ে বলে কে কতটা গুলি চালাবি চালা। তবু আমার মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান স্যারের মুখে ভাষার ইতিহাস শুনে মনটা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আসলে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাভাষা টিকায়ে রাখতে কত রক্ত দিতে হয়েছে। কত জীবন দিতে হয়েছে!
শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান স্যার বললেন, মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। মায়ের ভাষা মহান আল্লাহ্?তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত বা উপহার। নবী-রাসুলরাও মায়ের ভাষায় কথা বলতেন। পবিত্র আল-কোরআনের ভাষা আরবি। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) আরবে এসেছেন আর আরবের ভাষা ছিল আরবি এবং তখনকার শ্রেষ্ঠ ভাষা আরবি; তাই মহান আল্লাহ্? সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র আল-কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন। পবিত্র আল-কোরআনে মহান আল্লাহ্? সুবহানাহু তায়ালা বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি। যেন সে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে পারে। (সুরা ইব্রাহিম আয়াত : ০৪)
আমরা শ্রদ্ধেয় স্যারের জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে অনুপ্রাণিত হলাম। উজ্জীবিত হলাম। আমাদের প্রাণের প্রিয় মাতৃভাষার প্রতি আরো ভালোবাসা বেড়ে গেল। যে ভাষার জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা কীভাবে রুখে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা ভাষার প্রতি আরো অনেক কিছু জানলাম। ফেব্রুয়ারি মাস বাংলাভাষার মাস। এই মাসে আমরা তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। যাদের কারণে আজকে আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পাচ্ছি বাংলাভাষায় মহান আল্লাহর গুণগান গাইতে পাচ্ছি। বুক ফুলিয়ে বাংলার বুকে চলতে পাচ্ছি। বাংলাভাষায় ছড়া কবিতা, গল্প ও মনের বাসনা পূরণ করতে পাচ্ছি। আল্লাহ্? সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।
"