reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল, ২০২০

করোনাকালে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

‘করোনাভাইরাস’ কয়েকদিন আগেও এ নামটি আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল। এখন সবার মুখে মুখে এ ভাইরাসের নাম, যার সংক্রমণের ভয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। ‘করোনা’ শব্দটি লাতিন ‘ক্রাউন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ রাজমুকুট। ২০১৯ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগ হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯। বাংলাদেশেও এ ভাইরাসের বিস্তার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনসাধারণকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সেলফ কোয়ারেন্টাইন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত সীমিত বা বন্ধ করতে গোটা এলাকা লকডাউন করে দিচ্ছে প্রশাসন। সামাজিক দূরত্বের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখবে যেন করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে না পারে।

সেলফ বা হোম কোয়ারেন্টাইন কী?

সেলফ বা হোম কোয়ারেন্টাইন বলতে বোঝায়, করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তি, স্বেচ্ছায় বা সরকারি বাধ্য বাধকতায় অন্তত ১৪ দিন নিজ বাড়িতে অবস্থান করবেন। এ সময় তিনি সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ রাখবেন এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখবেন।

আইসোলেশন কী?

আইসোলেশন একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যিনি সম্পূর্ণ

সুনিয়ন্ত্রিতভাবে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ১৪ দিন বসবাস করবেন। কোভিড-১৯ একটি সেলফ লিমিটিং ডিজিস অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর এ ভাইরাস সংক্রমণের সুযোগ না পেলে আর বিস্তার লাভ করতে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিচের কাজগুলো করতে হবেÑ

১। রুটিন মাফিক কাজ করুন

সময় মতো গোসল, আহার, পরিষ্কার কাপড় পরুন। নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক মনে করুন।

২। দৈনন্দিন কাজ

নিজেকে সারা দিন ব্যস্ত রাখতে বইপড়া, হাতের ছোটখাটো কাজ, ল্যাপটপে বা ডেস্কটপে কাজে ব্যস্ত থাকুন। টিভি দেখা, গান শোনার মতো আনন্দদায়ক কাজ করুন।

৩। শরীরের যত্ন

হালকা ব্যায়াম করা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

৪। যোগাযোগ রাখুন

মোবাইল, ই-মেইল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

৫। তথ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুন

মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব, ভিত্তিহীন সংবাদ অস্থিরতা তৈরি করে যা মানসিক রোগের কারণ। তাই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিহার করুন। দিনের নির্দিষ্ট সময় নির্ভরশীল উৎস থেকে তথ্য নিন। যেমন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সিডিসি, ডিজিএইচএস, আইইডিসিআর, ইত্যাদি।

৬। বিরক্তি দূর করুন

যে কাজগুলো করতে আপনি পছন্দ করেন, তা অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রতিদিন করুন। আপনার পছন্দের গান, নাটক, সিনেমা দেখুন বা ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ুন। এতে বিরক্তিবোধ কমবে। ধর্মীয় অনুশাসন যেমন- নামাজ, ধর্মীয়গ্রন্থ পড়া, পূজা বা আরাধনা ইত্যাদি বাড়িতে পালন করুন।

৭। নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতি

কখনো কখনো নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে, টেলিফোনে স্বাস্থ্য সহায়ক কেন্দ্রে ফোন দিয়ে কাউন্সেলিং নিন। অত্যাধিক কাজ বা সংবাদ পরিহার করুন। মেডিটেশন করুন, এতে মনে প্রশান্তি আসে।

৮। ইতিবাচক চিন্তা করুন

আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ সুস্থ হচ্ছেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর সুস্থ হয়েছেন, এমন কারো অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন।

৯। বাড়ির অন্য সদস্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন

বাড়ির অন্য সদস্যরা যেন অসুস্থ না হয়, তাই তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। আপনার সুস্থতা বাড়ির অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

১০। টেলিমেডিসিন

শারীরিক বা মানসিক যেকোনো অসুস্থতার জন্য টেলিফোনে বা টেলি কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা নিন।

সেলফ বা হোম কোয়ারেন্টাইনের ১৪ দিন যেন আপনি নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে পারেন। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। এ সময় মানসিক রোগে যেন আক্রান্ত না হন, সেজন্য আপনাকে নির্ভরযোগ্য তথ্য জানতে হবে এবং সময়গুলো সুন্দরভাবে কাটাতে হবে। করোনা ভাইরাসকে ভয় নয়, জয় করতে হবে। আপনার সুস্থতাই পরিবার ও সমাজের নিরাপত্তা এবং জাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

লেখক : ডা. মো. রশিদুল হক, সহকারী অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, এবং দফতর সম্পাদক, এফডিএসআর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close