গাজী শাহনেওয়াজ

  ২০ অক্টোবর, ২০১৭

শিগগিরই চালু হচ্ছে ই-সিস্টেম

স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে এনআইডির নথি

৩০ দিনে মিলবে সেবা * দায়িত্ব অবহেলায় শাস্তি

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন, ঠিকানা স্থানান্তর এবং পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য যারা আবেদন করেছেন; কিন্তু তাদের নথিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাসময়ে কাজ করেননি-এমন পরিস্থিতিতে সেই নথি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন ভিত্তিতে চলে যাবে পরবর্তী ধাপে, ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার দফতরে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ উইং (এনআইডি) এ-সংক্রান্ত ইলেকট্রনিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ই-সিস্টেম) প্রবর্তন করতে যাচ্ছে; যা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামে সর্বত্র পরিচিত। এই পদ্ধতিতে একটি পরিচয়পত্র সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ দিন। বিগত দিনে ন্যূনতম সময় লাগত ৪৫ থেকে ৬০ দিন; ক্ষেত্রবিশেষে বছরও পেরিয়ে যেত। এটি হচ্ছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। ফলে কাগজের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হবে। সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটা অঙ্কের ঘুষ পাওয়ার জন্য যারা ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাগ্রহীতাদের ফাইল আটকে দিতেন, জবাবদিহিতার মধ্যে আসবেন তারাও। সিস্টেমের কারণে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে শাস্তিও পাবেন। এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, কাজে গাফিলতির জন্য জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার।

এনআইডির সূত্রমতে, হারানো কার্ড উত্তোলনে, ঠিকানা স্থানান্তরে এবং ভুল সংশোধনের জন্য ভোটার নাগরিকদের ঢাকায় আসতে হয় না। স্ব স্ব উপজেলায় আবেদনটি জমা দিলে এই সেবাটি পাওয়া যেত। তবে, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদনকারীর তথ্য যাচাই-বাছাই করে সরাসরি সফটওয়্যারটি আপলোড করে এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য সিডিতে ভরে এনআইডি উইংয়ে এসে সংশ্লিষ্ট কার্ডটি মুদ্রণ করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু তার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এ-সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত থাকতেন না। ফলে গ্রাহকদের হয়রানি করে পার পেতেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। এমনকি যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন, তাদেরটি দ্রুত কাজ হতো, বাকিদের ৫-৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সংশোধিত আইডিটির বিষয়ে কোনো খবর থাকত না।

এ অবস্থার পরিবর্তন এবং ভোটার নাগরিকদের দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতে নতুন পদ্ধতির উদ্যোগ নিয়েছে এনআইডি উইং। এতে জনগণকে দ্রুত সময়ে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বর্তমানে ব্যবহৃত কার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারটি উন্নীত করা হয়েছে। আপডেট ভার্সনে এই আবেদনটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা প্রদানের পর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলে যাবে। সংশ্লিষ্ট অফিসে তিন কার্যদিবস পর্যন্ত থাকার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার (আরইও) কাছে স্থানান্তরিত হবে। এখানেও তিন কার্যদিবস অবস্থান করার পর সিস্টেমে এটি অটোমেটিক্যালি মূল সার্ভার অর্থাৎ এনআইডি উইংয়ে অগ্রায়িত হবে। উপজেলা, জেলা এবং আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ১৬ কার্যদিবস থাকার পর এইআইডিতে থাকবে ১০ কার্যদিবস। আর বাকি চার কার্যদিবসের মধ্যে পোস্ট অফিস কিংবা বিশেষ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলার মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে যাবে।

পরিচয় গোপন রেখে এনআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত কাজটির জন্য ভোটার নাগরিক সেবা পেতে আবেদন জানানোর পর উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস এটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রায়ন না করেন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। আর এনআইডি উইংয়ে আবেদন আসার পর ১০ দিনের মধ্যে এই আবেদনটি নিষ্পত্তি করবে এবং ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে এনআইডির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কোন আবেদন এনআইডি উইং মঞ্জুর করলে সংশোধিত পরিচয়পত্র মুদ্রণ করে সেটি ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই কাজটির জন্য ডাক বিভাগের সঙ্গে এনআইডিং উইংয়ের একটি এমওইউ বা সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ডাক বিভাগ তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় এটি পৌঁছে দিতে বাধ্য থাকবেন; এ-সংক্রান্ত শর্তারোপ করে চুক্তি সম্পন্ন করা হবে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা আরো বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। পাশাপাশি এই প্রযুক্তি সম্পর্কে মাঠ কর্মকর্তাদের সম্যক ধারণা দিতে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ প্রদান করার পর এই সিস্টেমটি উন্মুক্ত করা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেনম, এই কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক হবে। এখানে কাগজের কোনো ব্যবহার থাকবে না। এটি ইন্টারনেটে উপজেলা থেকে জেলা থেকে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস হয়ে এইনআইডি উইংয়ে আসবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কলম ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। কারণ আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিস্টেমে সংযোজিত হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের ডিজি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, হারানো কার্ড উত্তোলন, ঠিকানা স্থানান্তর এবং ভুল সংশোধন করার ক্ষেত্রে মানুষের দুর্ভোগটা কীভাবে কমানো যায়; সে লক্ষ্যে কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পদ্ধতি চালু করা হলে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ সব প্রক্রিয়া যেমন আবেদনপত্রটি নিষ্পত্তির জন্য সর্বোচ্চ এক মাস সময়ের মধ্যে শেষ করতে চিন্তাভাবনা করছি। কারণ দুর্ভোগের সঙ্গেই আমাদের সবকিছু সম্পৃক্ত। এমনকি কেউ যাতে কোনো অন্যায় কাজে জড়িত না হতে পাারে-এ সফটওয়্যার কর্তৃপক্ষের জন্য সহায়ক হবে। ডিজি বলেন, মূলত দুটি কারণে এই পদ্ধতিতে যাচ্ছি আমরা। এর একটি মানুষের সেবাটা তাদের দ্বার প্রাপ্তে পৌঁছে দেওয়া। অন্যটি যত দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকারটা সঠিক সময়ে পাবেন। তিনি বলেন, আগে এই কাজটির জন্য কখনো ৪৫ দিন সময় লাগত, আবার ক্ষেত্র বিশেষে তিন মাসের বেশি সময় লাগত। এখন একই ধরনের সেবা পেতে গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হবে মাত্র ৩০ কার্যদিবস। এ কাজটি যাতে যেকোনো মূল্যে করতে পারি, সেই প্রচেষ্টাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কাজটির জন্য উপজেলা অফিসে ১০ দিন, জেলা ও আঞ্চলিক অফিসে তিন দিন করে ৬টি এবং এনআইডি উইংয়ে ১০ দিন এবং পাঠাতে ৪ দিনসহ মোট ৩০ দিন নির্ধারণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ১৭ লাখ নাগরিক ভোটার পরিচয়পত্রের আওতায় এসেছেন। এসব নাগরিকদের মধ্যে অসংখ্য নাগরিকের পরিচয়পত্রে ভুল রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist