আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জাতির উদ্দেশে ভাষণ

‘যাচাই করে’ রোহিঙ্গা নিতে রাজি সু চি

* রাখাইনে সবার দুর্ভোগ গভীরভাবে অনুভব করে সরকার * মুসলিমরা কেন পালাচ্ছে, তা সরকার খুঁজবে * আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার * রাখাইনে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ

অবশেষে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মুখ খুললেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। নব্বইয়ের দশকে করা প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় ‘যাচাইয়ের মাধ্যমে’ বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার প্রস্তুত বলে প্রতীক্ষিত ভাষণে জানিয়েছেন তিনি। সু চি বলেছেন, ‘যে শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফিরতে চায়, ওই চুক্তির আওতায় আমরা যেকোনো সময় তাদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত। আর যে শরণার্থীরা মিয়ানমার থেকে গেছে বলে চিহ্নিত হবে, কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার পূর্ণ নিশ্চিয়তা দিয়ে আমরা তাদের গ্রহণ করব।’ রাখাইনে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের পার্লামেন্টে তিনি এ ভাষণ দেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে গত প্রায় এক মাসে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে বর্ণনা করছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনায় থাকা সু চি গতকালই প্রথম রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে জাতির সামনে বক্তব্য দিলেন। রাখাইনের পরিস্থিতির কারণ ওই রাজ্যের মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সু চি ইংরেজিতে দেওয়া তার আধা ঘণ্টার বক্তৃতায় কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও তিনি সরাসরি কিছু বলেননি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার পক্ষে আপাতত যাওয়া সম্ভব নয় বলেই এই ভাষণটি দেন বলে সু চি জানান। বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তার সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানোই এই ভাষণের উদ্দেশ্য। ভাষণের শুরুতেই সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করে নোবেল বিজয়ী সু চি সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অনৈতিক সংঘাত-সন্ত্রাসের নিন্দা জানান।

সু চি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই। রাখাইন রাজ্যজুড়ে আইনের শাসন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তবে তিনি এ-ও বলেছেন, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ রয়েছে। সবার অভিযোগই শুনতে হবে। প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়ার পরই পদক্ষেপ নিতে হবে। সু চি বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, যারাই এ দেশের আইনের বিরুদ্ধে যাবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সু চি দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর কোনো ধরনের সহিংসতা বা নির্মূল অভিযান রাখাইনে হয়নি। অবশ্য বাংলাদেশের টেকনাফে থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বরও সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে ধোঁয়ার কু-ুলি উঠতে দেখা গেছে।

বিবিসি লিখেছে, চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সু চি তার বক্তৃতায় বলেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মিয়ানমার সরকার কী করছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানুক। রাখাইন থেকে মুসলমানরা কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে, তা মিয়ানমার সরকার খুঁজে বের করতে চায় জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন পরিদর্শনে যাওয়ারও আমন্ত্রণও তিনি জানিয়েছেন। সুচি বলেছেন, রাখাইনের সংকট নিরসনে কফি আনান কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চায় তার সরকার। তবে তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় এসেছে মাত্র ১৮ মাস হতে যাচ্ছে। এত অল্প সময়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। রাখাইনের সবার দুর্দশার বেদনা আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি।’ তিনি দাবি করেন, মিয়ানমার সরকার রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে এবং বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

সু চির ওই ভাষণের পর রাখাইনের ওই অঞ্চলে যাওয়ার পূর্ণ সুযোগ চেয়েছে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল, যাতে নিজেদের চোখে বাস্তবতা দেখে তদন্ত করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist