ক্রীড়া ডেস্ক
ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ
বাংলাদেশের বিদায়
রোববার লন্ডনের ওভালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা লড়াই। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়েই শেষ হবে আট জাতির রোমাঞ্চের প্রতিযোগিতা। কিন্তু বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে কাল রাতেই। এজবাস্টনে ভারতের কাছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরে স্বপ্নযাত্রার রথ থেমেছে টাইগারদের। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির রাজসিক ব্যাটিংকে ভিত বানিয়ে শিরোপা ধরে রাখার মিশনের শেষ ধাপে চলে এসেছে ভারত। ৪১তম ওভারের প্রথম বলেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে ভারত।
নিজেদের ইতিহাসে সেরা বোলিং শক্তি নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এবারের আসরে সবচেয়ে নিষ্প্রভ ছিল টাইগারদের বোলিংই। তাসকিন-মাশরাফি-মুস্তাফিজ-সাকিবদের বোলিং ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না। পুরো ইনিংসে মাত্র ১টি উইকেটই শিকার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। রোহিত ১২৩ রানের অজেয় ইনিংস খেলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন দলকে। তাকে সঙ্গ দিয়ে কোহলি উপহার দিয়েছেন অধিনায়কোচিত ইনিংস। বাংলাদেশ আর কিছু রান করলে হয়তো সেঞ্চুরিটা পেতে পারতেন কোহলিও। কিন্তু শতকের আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত (২৬৫/১)।
অধিনায়ক অপরাজিত ৯৬ রানে!
৪৭ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শিখর ধাওয়ান। ৮৭ রানে উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছেদ হয় তার আউটেই। ভারতীয় ওপেনারকে মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যাচে পরিণত করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি।
বোলিংয়ে ভারতের একমাত্র উইকেটটি শিকারের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও স্বরূপে ছিলেন মাশরাফি। শেষ দিকে তার ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংসের সুবাদে কোনো রকম লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল টাইগাররা। ২৫ বলের ইনিংসে ৫টি চার শোভা দিয়েছিল মাশরাফির ছোটখাটো ঝড়ে।
আরেকটি ইতিহাসের হাতছানি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের চাপটা সামলে উঠতে পারেনি টাইগাররা। ব্যতিক্রম শুধু তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পরও এ যুগল যেভাবে সাজঘরে ফিরলেন যেটা সত্যিই দৃষ্টকটু। হার্দিক পা-িয়ার ‘নো’ বলে স্ট্যাম্পড হয়ে জীবন বাঁচার পরও ইনিংসটাকে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পরিণত করতে পারেননি তামিম।
তবে দলের জন্য যতটুকু করার সেটা ঠিকই করেছেন বাঁ-হাতি ওপেনার। ৭০ রানের দারুণ যে ইনিংসটা তামিম খেলেছেন সেটা চাপের মধ্য থেকেই। শূন্য রানে সঙ্গী সৌম্য সরকারকে হারানো বাংলাদেশ ধাক্কাটা সামলে ওঠার আগেই সাজঘরে ফিরলেন সাব্বির রহমান। প্রথমজন প্রথম ওভারের শেষ বলে, দ্বিতীয়জন বাইশ গজ ছাড়া হয়েছেন সপ্তম ওভারের শেষ বলে। ৩১ রানে ২ উইকেট খুইয়ে তখন পুরোদস্তুর চাপে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে ত্রাতারূপে হাজির হলো তামিম-মুশফিকের চতুর্থ উইকেট জুটিটা। এই জুটির ওপর দাঁড়িয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় দারুণভাবেই সামলে নেয় টাইগাররা। ২৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১৫২ রান করা বাংলাদেশ অনায়াসে ৩০০ ছাড়াবে এমন স্বপ্নও বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু স্বপ্নটা বাতাসেই মিশে গেছে নিমিষেই। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৬৪ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এ রানটাও এলো মাশরাফির এলোপাতাড়ি ব্যাট ঘোরানোর ছোঁয়ায়।
না হলে ৪৫তম ওভারেই তো রান তোলার শেষ ভরসাও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১১ রানের মধ্যে ফিরে গেছেন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ। ২২৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আড়াই শ রান করতে পারবে কি না, সে অপেক্ষায় ধুঁকে ধুঁকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ বলে মাশরাফির অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংসের প্রতিটা রান তাই হয়ে গেল শেষের অবলম্বন।
তামিম, সাকিব, মুশফিক-এই তিন স্তম্ভকে হারিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায়। ২৮ ওভারের পর ওভারে ৬ বা এর বেশি রান নিতে পেরেছে মাত্র ৮ বার। অথচ এই সময়েই তো ঝড় তোলার কথা ছিল বাংলাদেশের! হাতে ছিল ৮ উইকেট। কোহলির কেদার-জুয়াটা দারুণভাবে লেগে গেল বলেই পথ হারাল বাংলাদেশ। ১২৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটির পর বাংলাদেশ ছুটছিল দুরন্ত গতিতে। ৭০ রান করে তামিম ইকবাল ফেরার পরও আঁচটা সেভাবে গায়ে লাগেনি। উইকেটে তখন ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
কিন্তু কাট করতে গিয়ে সাকিব ফিরলেন ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। পরের ওভারেই এর চেয়ে বাজে এক শট খেলে আউট হয়েছেন মুশফিক। কেদার যাদবের ফুল টসে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক। মুশি ফিরলেন ৬১ রানে। দুটি ঘটনাই ঘটল ৭ বলের ব্যবধানে। ৭ বলেই পাল্টে যায় সব হিসেব-নিকেশ।
"