নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ জুলাই, ২০২০

রাজধানীতে হাটে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা

গরুর চেয়ে ছাগল কেনায় ঝোঁক বেশি

দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানি ঈদ। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশু কেনাকাটা। পছন্দের পশু কিনতে ঈদের আগের দিনকেই বেছে নেন ক্রেতারা। সেই হিসাবে আজ ও গতকাল এই দুই দিনই হবে বেচাকেনা। এদিকে, শেষ মুহূর্তে এসে ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে কমেছে দামও। এবার অনলাইনেও বেশ জমে উঠেছে পশুর হাট। ঈদের কেনাকাটার শেষ মুহূর্তে এসে অনলাইনে পশু কেনাকাটার হার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই প্ল্যাটফর্মে পশুর দাম তুলনামূলক কম বলেও দাবি তাদের।

ঢাকার গরুর হাটগুলো শুরু হলে অনলাইনে বেচাকেনা কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সাধারণ হাটের চেয়ে ই-কমার্স শপগুলোতে বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়েছে। দাম কম হওয়ায় ই-কমার্স শপগুলোর বেচাকেনা বেড়েছে। এ বিষয়ে ই-ক্যাবের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আসলে ক্রেতাদের সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে গরু সংগ্রহে জোর দিয়েছি। আমাদের যারা খামারি ও উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের আমরা একটি মূল্যসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। ফলে দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এ মূল্যসীমা সারা দেশে পশুর বাজারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। এ মূল্যসীমার কারণে এবারে গরুর দাম বাড়াতে পারবে না অন্যরা।

এছাড়া বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শাহ ইমরান বলেন, আমাদের বেশিরভাগ গরুই ডিজিটাল স্কেলে ওজন মাপা। যেসব গরু বাইরে থেকে আসবে তাদের গরুগুলো ঈদের আগের দিন ওজন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সুতরাং এখানে কোনো প্রতারণার সুযোগ নেই।

গরুহাট ডটকমের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাহীন বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে গরু কিনছি। ফলে একদিকে কৃষক উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে সেরা গরু পাচ্ছে। উপরন্তু, অনলাইনে হাসিল না থাকার কারণে ক্রেতারা আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। করোনার ব্যাপার তো আছেই।

এদিকে, এবার গরুর চেয়ে ছাগল কেনায় ঝোঁক বেশি। তবে বাজার গরম। ছাগলের যে দাম চায় তাতে গরুই নেওয়া সম্ভব।

রাজধানীর মেরাদিয়া পশুর হাটে দেখা যায়, গরুর ক্রেতা বিক্রেতা বেড়েছে। ছাগলের বাজারেও বেড়েছে ক্রেতা। তবে দামে বনিবনা না হওয়ায় বিক্রি কম। বিক্রেতাদের অভিযোগ, ন্যায্যমূল্য চাওয়া হলেও ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তারা। ক্রেতারা বলেন, গরুর ক্রেতা কম থাকায় ছাগলের বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। এই হাটে রামপুরা থেকে আসা আবু জাফর সিদ্দিক বলেন, আজ নিয়ে দুই দিন হাটে হাটে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অনেক ব্যাপারীর গরুর চড়া দাম শুনে, দাম বলতেও ভয় লাগে। যাও বলছি তাতে ব্যাপারীরা সন্তুষ্ট নয়।

ওই হাটের আরেক ক্রেতা আবিদ বলেন, একটি গরু দেখে পছন্দ করেছি। কিন্তু বিক্রেতা খুবই চড়া দাম বলছে। আগের বার যে গরু কিনেছি ৭৫ হাজার টাকা। এবারে সেই সাইজের গরুর দাম বলছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন আমি তা ১ লাখ টাকা বলেও পাচ্ছি না।

আফতাবনগর হাটে আসা যশোরের গরুর ব্যাপারী আমজাদ বলেন, এবারের হাটে ২৫টি গরু নিয়ে এসেছি। গত দুই দিনে মাত্র দুটি গরু বিক্রি করেছি। হাট জমজমাট হওয়ায় আজ বিকালের মধ্যে চারটি গরু বিক্রি করেছি। বিক্রি করা গরুর সবই মাঝারি সাইজের। বিক্রি করেছিও এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বড় সাইজের গরু বিক্রিই হচ্ছে না।

গাবতলীর হাটে কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যাপারী হামজা বলেন, হাটে দেশি গরুর চাহিদা বেশি, সেই কারণে এ গরুর সংখ্যাও বেশি। অন্য গরুর তুলনায় হাটে দেশি গরুর বেশি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশি বেশি দামও কিনে আনতে হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের লাভ হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, দেশি গরু কিনেছি বেশি দামে, কিন্তু লাভ বেশি করতে পারছি না। ২১টি গরু নিয়ে এসেছি। আজ চারটি বিক্রি করেছি।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর ২৪টি হাটে পশু বেচাকেনা হচ্ছে। সারা দেশে এ বছর ২ হাজার ৩৬২টি কোরবানি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বসছে ২৪টি। যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার রাজধানীর চারপাশে হাট বরাদ্দ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এই হাটগুলোর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি হাট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close