নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ জুলাই, ২০২০

করোনায় প্রস্তুতি পেছাল গাবতলী পশুর হাটের অনলাইনে উৎসাহ

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে রাজধানীর গাবতলীতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই একটু ভালো দামের আশায় খামারিরা তাদের পশু নিয়ে আসেন এই হাটে। তবে ঈদের আনুমানিক দিন-তারিখ জানা গেলেও এবার এখনো শুরু হয়নি গাবতলী পশুর হাটের প্রস্তুতি। গতকাল বুধবার রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে হাটে কিছু পশু এলেও তা স্বাভাবিক সময়ের মতো বলেই দাবি হাটের ব্যবসায়ীদের। ঈদে কোরবানির পশুর বাজার শুরু হতে আরো সময় লাগবে বলে মন্তব্য তাদের। একই সঙ্গে আরো প্রায় এক সপ্তাহ পরে ঈদের হাটের প্রস্তুতি শুরু হবে।

এ বিষয়ে হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে হাটের প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। এটা প্রতিবার ঈদের এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়। তবে এবার করোনার জন্য সময় আরো বেশি লাগবে। এছাড়া এবার এখনো হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। ইজারা সম্পন্ন হওয়ার পরেই মূল প্রস্তুতি শুরু হবে। সব মিলিয়ে এখনো প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে প্রস্তুতি শুরু করতে। করোনা মহামারির মধ্যে হাটে অতিরিক্ত লোক সমাগম বিষয়ে তিনি বলেন, এবারের হাটের প্রস্তুতি করোনার জন্য একটু ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এটা এবার কীভাবে চলে এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্য নির্দেশনা মেনেই কাজ করার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে ওপর থেকেও বিশেষ নির্দেশ রয়েছে।

এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ এই কোরবানির পশু বিক্রির হাটের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি করোনার সুরক্ষার ব্যাপারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি হাট ইজারাদার ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ভলান্টিয়ার দল থাকবে বলে জানিয়েছেন গাবতলী পশুর হাট কর্তৃপক্ষ।

করোনাভাইরাসের কারণে এবার অনলাইনে গরু কেনার জন্য সরকার উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, যেখানে সেখানে গরুর হাট না বসানোর জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

আমরা সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করছি অনলাইনে গরু কেনার জন্য। গরুর মালিক যাতে ঘরে বসে গরুটি বিক্রি করতে পারেন। টাকা-পয়সা ক্রেডিট কার্ড কিংবা বিকাশে যদি লেনদেন করা যায় তবে ভালো। আমরা এটা সব জায়গায় প্রোমোট করছি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সদস্যদের সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের কাছে মাস্ক তুলে দেন বিসিএস ৮৫ ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. মোশাররফ হোসেন এবং সহসভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে স্থানীয় সরকার সচিব বলেন, এবার ট্রেডিশনালি হাটবাজার বসবে না। এবার গরুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে মাস্ক পরতে হবে, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে। সামনে সাবান-পানি থাকবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা শারীরিক দূরত্ব মেনে বেচাকেনা করবেন। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি।

এবার সিটি করপোরেশনের জনবল পশু জবাই করে বাসায় পৌঁছে দেবে জানিয়ে সচিব বলেন, এবার চেষ্টা করছি সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্দিষ্ট জায়গায় যাতে গরুগুলো জবাই হয়।

‘সিটি করপোরেশন গরু জবাইয়ের দায়িত্ব নেবে। গরু জবাইয়ের পর বাড়িতে পৌঁছে দেবে। এখানে কাউকে আসতে হবে না। এজন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। বিষয়গুলো আমরা ভেবেছি।’

পরে গাবতলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাটের বর্ধিতাংশে এখনো ইটভাটার ইট জমা হয়ে আছে। অথচ এই জায়গাগুলোতে প্রতিবার ঠাঁয় পায় বাজারের সবচেয়ে বড় পশুগুলো। এছাড়া প্যান্ডেল করা, প্যান্ডেলে বাঁশ লাগানো, লাইট লাগানো, বা শামিয়ানার কাজও শুরু হয়নি এখনো।

নূর বারী সিদ্দিক নামে একজন ছাগলের ব্যবসায়ী জানান, এবার করোনার কারণে সবকিছুই ঢিলেঢালা। বাজারে তেমন ছাগল-গরু আসছে না। কিছু পশু এলেও ক্রেতা কম। ঈদ উপলক্ষে এবার অনেক ব্যবসায়ীই করোনার জন্য হয়তো বাজারে পশু আনবেন না। সব মিলিয়ে এবার ব্যবসা কেমন যাবে তা বলা মুশকিল। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।

অন্য ব্যবসায়ীদের মতামতও প্রায় এক। এ বিষয়ে গরু ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে হাটের মূল বেচাকেনা হয় শেষের তিন দিন। পশুও আসে ওই সময়ই। তাই এখন তেমন তাড়াহুড়ো নেই। বর্তমানে হাটের নিয়মিত বিক্রেতা যারা আছেন, তারা কিছু কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন। তবে কোরবানি উপলক্ষে সেগুলো থেকে বিক্রি হয়নি একটিও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close