নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মে, ২০২০

ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে ৫ রোগীর মৃত্যু

* ১২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে ৯ টিই মেয়াদোত্তীর্ণ * তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের কমিটি

ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগীদের ইউনিটে বুধবার রাতে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাতে বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে। আধঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও তার মধ্যেই পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কী কারণে এই অগ্নিকা- ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে তারা জানতে পেরেছেন। নিহতরা হলেন মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

এদিকে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ১২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে ৯ টিই মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এছাড়া অগ্নিকা-ের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি। অন্যদিকে, অগ্নিকা-ে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ফায়ার ব্রিগেড ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবুল চক্রবর্তী, উপসহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ এবং বারিধারার জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।

কমিটির অন্যতম সদস্য আজাদ বলেন, কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো আলামত যেন না সরানো হয় সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ওই ওয়ার্ডের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, যিনি ফায়ার ব্রিগেডে প্রথম ফোন করেছিলেন তাদের সবার বক্তব্য নেওয়া হবে।

জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার আজাদ বলেন, আজ শনিবার সকালে তারা সবার বক্তব্য শুনবেন। তারপর সবকিছু সমন্বয় করে প্রতিবেদন দেবেন।

গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান জানান, মাহবুব ১৫ মে, মনির হোসেন ১৬ মে, অ্যান্থনি পল ও খোদেজা বেগম ২৫ মে এবং রিয়াজুল আলম ২৭ মে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।

এদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উপকমিশনার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল আহাদ। দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরুতে ইউনাইটেডে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করা না হলেও মাসখানেক আগে ভর্তি শুরু হয়েছিল।

এজন্য হাসপাতালের নিচে প্রাঙ্গণের একাংশে তাঁবু খাটিয়ে করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই রাত ১০টার দিকে আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের নিচতলায় রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আগুন লেগেছিল। আমাদের ৩টি ইউনিট তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, অগ্নিকা-ের সময় জানতে ভারনন অ্যান্থনি পলের মেয়ের স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তিনি হাসপাতালের ফটকে ছিলেন এবং যখন অগ্নিকা-ের ঘটনা দেখতে পান, তখন ৯টা ৪৮ মিনিটে ৯৯৯ ফোন দেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।

গুলশান থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের বাইরের দিকে করোনা রোগীদের জন্য যে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেখানে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত আরেক কর্মকর্তা কামরুল হাসান রাত ১১টায় বলেন, হাসপাতালটির নিচতলায় চারটি আইসোলেশন কক্ষ ছিল। সামনের কক্ষের রোগীরা বের হতে পারলেও ভেতরে একটি কক্ষে ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

অগ্নিকা-ের কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।

পুলিশ উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ফায়ার সার্ভিস সঠিক কারণ এখনো জানাতে পারেনি। তবে প্রাথমিকভাবে বলেছে, এখানে এসি ছিল এবং এসির স্পার্কিং থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে যেসব উপাদান ছিল, সবই দাহ্য পদার্থ। এখানে স্যানিটাইজার ছিল, স্যানিটাইজারগুলো দাহ্য পদার্থ। সে কারণে খুব অল্প সময়ে আগুন একটা বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন রোগী মারা যান।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার বলেন, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের উদ্ধার করতে না পারার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের বাইরে বের করা যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close