নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ এপ্রিল, ২০২০

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ২.৫২ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে এ সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো তুলে ধরে এ থেকে উত্তরণে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোসহ চারটি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন তিনি। গতকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনার ঘোষণা আসে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার ওই ব্রিফিং সরাসরি সম্প্রচার করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদিÑ এই চার ভাগে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি কার্যক্রম নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এই চারটি কার্যক্রম হবে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি গৃহহীনদের জন্য ঘর ও খাবারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ব্রিফিংয়ে তিনি নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প প্রতিষ্ঠানের জন ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন।

শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল : এসব খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল করা হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং মাঝারিশিল্পে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল : এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল করা হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে।

এ ক্ষেত্রেও সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণ গ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে সুদের ৪ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি : ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে।

এর ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে।

ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর+১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃতপক্ষে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম : এই নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল চালু করবে, যেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। নতুন চারটিসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।’

এসব আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দেশে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।

সেই সঙ্গে সবাইকে পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্য এই বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।’

বাংলাদেশের মানুষের ‘আশ্চর্য সহনশীলতা’ এবং ‘ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা’ রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেÑ সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা জাতির পিতা নিজেই বলে গেছেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close