জুবায়ের চৌধুরী

  ০২ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

গুজব ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস একের পর মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। নিজেদের বাঁচাতে অনেকটা দিশাহারা মানুষ। ঠিক এই সময়েও কিছু লোক গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত। তবে আশার ব্যাপার হলো, এক্ষেত্রে গুজব রটনাকারীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো ছাড় দিচ্ছে না তারা। প্রথম দিকে হুশিয়ারির পর এবার অ্যাকশন শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি বন্ধসহ বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। থানকুনি পাতা, চা পান, আদা অথবা রসুন দিয়ে গরম পানি খেলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়Ñ এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে এবং গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসে সংক্রমণের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আহ্বান এসেছে। গত ৮ মার্চ থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। মোট সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন।

গতকাল সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ধারণা ও গুজব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ভ্রান্ত ধারণা বা গুজবের মধ্যে রয়েছে থানকুনি পাতা খেলে, ঘন ঘন চা পান করলে, আদা অথবা রসুন দিয়ে গরম পানি খেলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ রোগ গরিবদের হয় না, বরং সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিশ্বাসীদের হয়ে থাকে। এছাড়া ঠান্ডা লাগলে বা জ্বর হলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।

তথ্যবিবরণীতে এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে এবং কোনো প্রকার গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঘরে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে জরুরি সেবা ছাড়া সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে সরকার। এই ছুটি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৮ মার্চ হতে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার মেনে চললে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী উপমহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে কিছু লোক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরই মধ্যে চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ঢাকার ডিএমপি ও কিশোরগঞ্জ থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঠিক কোথায় কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। তিনি আরো জানান, বিটিআরসির মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশের অন্তত ৫০টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব আইডির মালিকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়েছে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে এমন আরো ৮০টির মতো আইডি, পেজ ও ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কাজ করছে পুলিশ। এআইজি মিডিয়া জানান, আইজিপি আগেই হুশিয়ারি দিয়ে এসব অপপ্রচার না করতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। এরপরও গুজব বন্ধ হয়নি। যারা গুজব ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে গুজব রটানো ও ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, গেঞ্জি গায়ে ও লুঙ্গি পরিহিত এক যুবক মাটিতে বসে পড়েছেন। এক পুলিশ সদস্য তাকে হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করছেন। আরেকজন নারী পুলিশ সদস্য ওই যুবককে আঘাত করার জন্য লাঠি উঁচু করে রেখেছেন। যুবক ভয়ে হাত উঁচু করে আছেন। ছবিটি ‘লকডাউনের মধ্যে বাইরে বের হওয়ায় পুলিশ ওই যুবককে মারধর করছে’ বলে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। মহিলা পুলিশ সদস্যের মুখে মাস্ক পড়িয়ে এডিট করে এই ছবিটি দিয়েও এক শ্রেণির লোক গুজব রটিয়েছে। ছবিটি সারা দেশে পেট্রলবোমা হামলার সময় বিএনপির পার্টি অফিসের সামনের এক ঘটনার, বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ইউনিটে।

এ ছবির বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দুটি ছবি পেয়েছি, দুটিই ভুয়া। এগুলো এখনকার কোনো ঘটনার ছবি নয়। এই দুটি ছবির সঙ্গে জড়িত এবং গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়ানোর দায়ে ৩০টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাতজনকে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে ডেকে সতর্ক করে তাদের পোস্ট সংশোধন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে সারা দেশ থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার পুলিশের বিরুদ্ধে গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়াতে পুলিশ সদর দফতর থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সোশ্যাল মিমিডয়ায় অপপ্রচার ও গুজব ছড়ালে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনা প্রতিরোধে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। জাতির এই দুর্ভোগের সময় যেন কেউ গুজব রটিয়ে ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। তেমনই এক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকিছুই করোনার সংক্রমণ এড়াতে কাজ করছে, সেখানে গুটিকয়েক লোক গুজব ছড়িয়ে জল ঘোলা করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসব দেশবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close