প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ মে, ২০২৪

আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ

সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় এ নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেওয়ায় এই উত্তাপ ছড়িয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীসহ বড় বড় নেতাদের পাল্টাপাল্টি সমর্থনে সাধারণ নেতাকর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এ নিয়ে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম দফার ভোটাভুটি।

শ্রীপুর তিন ভাগে বিভক্ত উপজেলা আ.লীগ : আগামী ৮ মে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে প্রচার জমে উঠলেও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ উপজেলায় তৃতীয় মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন। এবার চেয়ারম্যান পদে তিনি দোয়াত কলম প্রতীকে লড়ছেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন মোটরসাইকেল, শ্রীপুর বাহিনীর সহ-অধিনায়ক মোল্লা নবুয়ত আলীর পুত্র শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম ঘোড়া প্রতীকে এবং খোন্দকার আসরার এলাহী আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। তাই স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা তিন প্রার্থীর জন্য তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।

মাহমুদুল গনি শাহীনের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক হুমায়উনুর রশিদ মুহিত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নেকবার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেবানন্দ বিশ্বাসসহ ছাত্রলীগের একাংশ রয়েছে।

মোটরসাইকেল প্রতীকে শরিয়তউল্লাহ রাজনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসমত আরা হ্যাপী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন মোল্যা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন কানন, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আনিচুর রহমান কনক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোন্দকার শফিকুল ইসলাম রবি, সহ-দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম টোকনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ রয়েছে।

অন্যদিকে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গয়েশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম মোল্যা, উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক খবির হোসেন খানসহ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে রয়েছেন।

সমর্থন দেওয়া নেওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছে।

ঝিনাইগাতীতে আ.লীগ-বিএনপি উভয় কর্মী-সমর্থকরাই মাঠে : ৮ মে নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় শেষ মুহূর্তের প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এবার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন লড়ছেন।

চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক দুবারের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা (দোয়াত কলম), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় (আনারস), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ (মোটরসাইকেল), উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ছামেদুল হক (ঘোড়া) ও মো. সরোয়ার বাহাদুর লাল (কাপ পিরিচ)।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি এবং বিএনপি ভোট বর্জন করায় ধানের শীষেরও কোনো প্রার্থী নেই। এ উপজেলায় দুই দল থেকেই যারা ভোটে রয়েছেন, তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারে রয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি নেতা মো. আমিনুল ইসলাম বাদশাকে এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারপরও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

উপজেলার পাইকুড়া বাজারেই শুক্রবার রাতে মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা তার কর্মী ও সমর্থক নিয়ে মিছিল করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাইকুড়া বাজারে পথসভা করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। এবারের নির্বাচনে প্রথম প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ শুক্রবার রাতে উপজেলার আয়নাপুর বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এছাড়া উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ছামেদুল হক ও মো. সরোয়ার বাহাদুর লাল উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গণসংযোগ করছেন।

মোংলায় আ.লীগ নেতারা একে অন্যকে ঘায়েলে মরিয়া : বাগেরহাটে মোংলা উপজেলা পরিষদে ভোট হবে আগামী ২৯ মে। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে মরিয়া। এ কারণে দলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এ উপজেলায় তিন পদে লড়ছেন ১৪ জন প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ হাওলাদার মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মোংলা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শাহজাহান সিদ্দিকী, পৌর যুবলীগের সহসভাপতি জামাল হেসেন, মোংলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজুল ইসলাম সানি, জাতীয় শ্রমিক লীগের বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জিহাদ সরদার টনি, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ আল আমিন, আওয়ামী লীগ সমর্থক সনেট হালদার ও ওবাইদুল ইসলাম। 

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শেখ কামরুন্নাহার হাই, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সরবরিয়া দরিয়া ও সোমা মন্ডল ছায়া মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

কালীগঞ্জে আ.লীগে আনারস-টেলিফোনের লড়াই : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন হবে ৮ মে। এ নির্বাচনে ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী গত ২২ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে নিরুত্তাপ হয়ে উঠে ভোটের মাঠ। প্রত্যাহার করা দুজন হলেন জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী (আ.লীগ) ও ওলিয়ার রহমান (জামায়াত)।

দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর কয়েক দিনের ব্যবধানে ভোটের মাঠ প্রার্থীদের প্রচারে আবারও মুখর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানীর আনারস প্রতীক ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেলের টেলিফোন প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। এ দুই প্রার্থী নিয়ে স্পষ্ট বিভক্ত এখন উপজেলা আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার সমর্থকদের মধ্যে এই হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এ দুই প্রার্থীর সমর্থকদের কঠোর মনোভাবের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল এখন স্পষ্ট। অপর ৩ প্রার্থী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি (মোটরসাইকেল), জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগরের (উত্তর) সহসভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ (কাপ-পিরিচ) ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের (হেলিকপ্টার) চেষ্টা করছেন প্রচারে সর্বোচ্চ অংশ নেওয়ার।

চেয়ারম্যান প্রার্থী শিবলী নোমানী বলেন, আমি ৫ বছর মানুষের সেবা করেছি। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমিও শতভাগ আশাবাদী। তবে আমার সমর্থকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে এরই মধ্যে অবহিত করেছি।

বিরামপুর দুই হেভিওয়েট চেয়ারম্যান প্রার্থীর লড়াই : আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দিনাজপুরের বিরামপুরে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের ১১ প্রার্থী। উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উঠান বৈঠক করে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা।

এবার বিরামপুর উপজেলা নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন হেভিওয়েট দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস মার্কার কৃষক লীগ নেতা মতিউর রহমান ও ঘোড়া মার্কা নিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ কবীর।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. মেজবাউল ইসলাম (টিয়া), খোরশেদ আলম মানিক (টিউবওয়েল), আতাউর রহমান (চশমা) ও আবদুল হাই (বই) মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উম্মে কুলছুম বানু (হাঁস), রেবেকা সুলতানা (ফুটবল), আমেনা বেগম (বৈদ্যুতিক) পাখা ও খাদিজা বেগম ইতি (কলস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

[প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি ও বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close