নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ফোনালাপ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে কাদের-ফখরুল

খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জিয়ার মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে তিনি টেলিফোনে কোনো কথা বলেননি। ফখরুলের এ কথার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুলের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড তার কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রয়োজন হলে এটা তিনি দিতে পারবেন। দুই দলের দুই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার ফোনালাপ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের ¯œায়ুচাপ শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে মির্জা ফখরুল ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেছেন বলে প্রথম জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি মিডিয়ার সামনে উপস্থাপনের পরও মির্জা ফখরুল ফোনের কথা এখনো স্বীকার বা অস্বীকার করেননি। তবে গতকাল তিনি স্পষ্ট করেছেন প্যারোল নিয়ে কোনো কথা তিনি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বলেননি।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল গতকাল দাবি করেছেন, ‘অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া উচিত। কারণ তিনি ছাড়া এই দেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে না। তবে তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারাবন্দি চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন সম্পূর্ণ তার পরিবারের বিষয়। এ বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো দলের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত প্যারোল নিয়ে কথা বলিনি, বলেছি কি? তো এটা নিয়ে কথা বলা কতটা সঠিক হয়েছে সেটা তিনি (ওবায়দুল কাদের) বিবেচনা করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার শরীরের যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী তিনি জামিন পাওয়ার কথা। তবে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে আটকে রেখেছে। আমরা এজন্য আন্দোলন করছি, গত দুই বছর ধরে আন্দোলনের মধ্যেই আছি।’

মির্জা ফখরুলের এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ফোনে কথা বলার রেকর্ড আছে। সেখানে প্রমাণ আছে তিনি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কী বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় তিনি অরো বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব আমাকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। অথচ এক জায়গায় বলেছেন তিনি নাকি কথা বলেননি। আসলে তিনি কি প্রমাণ করতে চান, তিনি অনুরোধ করেননি? তাহলে কিন্তু প্রমাণ দিয়ে দেব। কারণ ফোনে কথা বলার রেকর্ড আছে। তিনি আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, সেটার রেকর্ড আছে। আমি আর নিচে যেতে চাই না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা দুর্নীতির মামলা। সরকার কিভাবে মুক্তি দেবে? যদি রাজনৈতিক মামলা হতো তাহলে রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তির প্রশ্ন ছিল? যেহেতু এই মামলা রাজনৈতিক নয়, এই মামলা দুর্নীতির মামলা। আর মামলা এই সরকারও রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে হেয় করার জন্য রুজু করেনি। এই মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

খালেদা জিয়া মামলায় হাজিরা না দেওয়ার কারণে এই পরিণতি হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব ঝানু রাজনীতিক হতে পারেন কিন্তু তিনি তো ঝানু চিকিৎসক নন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, বার্ধক্যের কারণে তার যে অবস্থা থাকার কথা, তার শারীরিক অবস্থা তাই হয়েছে। কিন্তু ফখরুল সাহেব একবার বলেন, তার অবস্থা খারাপ, আবার বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close