নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন

সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব সামাজিক রোগ দেশের উন্নয়ন নষ্ট করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ এবং ১১৫তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে, যা আমাদের কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয়। এ ক্ষেত্রে আপনাদের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের জনগণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয়ের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে আমরা জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করে আরো বেশি উন্নয়নকাজ করতে পারি।’

মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা ইচ্ছা করেন, তবে তিনি সেখানে উন্নয়ন দৃশ্যমান করে কোনো কোনো জেলা, উপজেলা বা ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিতে পারেন। আপনাদের কাছে এ জাতীয় উদ্ভাবনী ধারণা, পরিকল্পনা এবং চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী মাদক, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের দিকেও সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে, বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যায়। ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই কথা বলতে যেন আর দ্বিধাগ্রস্ত হতে না হয়।’ দেশের উন্নয়নে কাজ করার জন্য তাদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে যেকোনো কাজে সততাটা কিন্তু সব থেকে বড় শক্তি। সরকারের সততার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সেটা তারা (বিশ্বব্যাংক) করেছিল আমাদেরই নিজস্ব কিছু লোকের প্ররোচনায়। যারা এই প্ররোচনা দিয়েছিল তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান এবং সুযোগ পেয়েছিল আমার হাত দিয়ে।’

এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোনের ব্যবসাটাও আমার দেওয়া। গ্রামীণ ব্যাংক যখন প্রথম করে সেই ৮৫ সালে। ৮৬ সাল থেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ। আমি এটার ওপর নিজেই প্রচার করেছি ক্ষুদ্রঋণের যে ধারণা। জাতিসংঘে তার জন্য রেজুলেশন আনা সেটাও আমি যখন ৯৬ সালে ক্ষমতায়। সেখানে আমাদের সরকারই সেটা উপস্থাপন করে পাস করিয়েছি। অথচ সেই লোকই গেল পদ্মা সেতু বন্ধ করতে। কেন? ‘ব্যাংকের একটা এমডির পদের জন্য। আমার প্রশ্ন ছিল, একটা নোবেল প্রাইজ পাওয়া লোক একটা ব্যাংকের এমডির পদের জন্য লালায়িত কেন? আইন ছিল ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। বয়স যখন ৭০ পার হয়ে ৭১-এ তখনো থাকতে হবে? এই অন্যায়ভাবে কেন থাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক নিষেধ করেছেÑ এটাই হয়ে গেল অপরাধ। সেই অপরাধে বন্ধ করে দেওয়া হলো পদ্মা সেতুর কাজ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বনামধন্য দুই পত্রিকার এডিটর তারা গিয়ে আমেরিকার কাছে ধরনা এবং যেহেতু হিলারি ক্লিনটনের বন্ধু... কাজেই সেখানে গিয়ে ধরনা দেওয়া হলো এবং পদ্মা সেতুতে টাকা বন্ধ করে বলল দুর্নীতি। আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলামÑ প্রমাণ করতে হবে যে দুর্নীতি হয়েছে।’

ওই সময় তার পরিবারের সদস্যদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে তিনবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডেকে ধমকিয়েছে এবং ভয় দেখিয়েছে। সে বলেছে, আমার মা কখনো মিথ্যা বলে না এবং এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তারা বলে, তোমার বিরুদ্ধে তদন্ত করব। সে বলে আমার বিরুদ্ধে আপনারা তদন্ত করতে পারেন, যেভাবে পারেন। আপনারা যা খুশি করতে পারেন।

‘আজকে সততার সঙ্গে ছিলাম বলেই এটা মোকাবিলা করতে পেরেছি। শেষ পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়েছে এবং কানাডার কোর্ট বাধ্য হয়েছে রায় দিতে যে, সম্পূর্ণ অভিযোগ ভুয়া, মিথ্যা। এটা কিছুই না। সততা নিয়ে না চললে কখনো এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারতাম না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশই পরিবার হিসেবে নিয়ে আমি দেশের উন্নয়নটা করতে চাচ্ছি। এ দেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুন্দরভাবে তাদের জীবনকে গড়ে তুলতে পারে।’ সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে নবীন কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কর্মচারীকে এটা চিন্তা করতে হবে, আমরা দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম। ‘নিজের পরিবারের প্রতি যেমন একটা দায়িত্ববোধ থাকবে, ঠিক সেভাবে নিজের দেশের মানুষের জন্যও সেই দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। সেই চিন্তা নিয়েই স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাই আমরা চাই।’

অনুষ্ঠানে পাঁচ মাসমেয়াদি তিনটি কোর্স শেষে প্রশাসন ক্যাডারের ১২০ কর্মকর্তাকে সনদপত্র বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর কাজী রওশন আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান ও জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close