নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ওবায়দুল কাদের কাউন্সিলে প্রার্থী হবেন না

দোষী হলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, দলের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে আমি প্রার্থী হব না, তবে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি চান, তাহলে আবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে রাজি। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেবেন কি-নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কি-না, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন। ‘পারসোনালি আমি কোনো প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। নেত্রী যাকে ইচ্ছা দেবেন। আমাকে যদি তিনি থাকতে বলেন সেটা তিনি বলতে পারেন। আবার বলতে পারেন বিদায়, আরেকজন আসবে, নতুন মুখ আসবে। ওয়েলকাম, কোনো অসুবিধা নেই’Ñ যোগ করেন কাদের।

এদিকে, ছাত্রলীগের কাছে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য (ভিসি) ফারজানা ইসলামের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে এরই মধ্যে সংগঠন থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের চাঁদা থেকে কমিশন নেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবির বিষয়টি বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। সরকার এটা কীভাবে দেখছেÑ জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসির পদত্যাগ কী কারণে, নৈতিক স্খলন। সেটা যদি তদন্ত করে প্রমাণ হয়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং যুবলীগের অভিযোগবিদ্ধ নেতাদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপকর্ম-অনিয়ম যারা করে, তারা দলে না থাকাই ভালো। এ ধরনের নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই মনে করি যথার্থ এবং দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। দলের কেউ যখন ‘অপকর্ম’ করে, তখন তা সরকারের উন্নয়ন অর্জন ‘মøান করে দেয়’। একটি ‘খারাপ আচারণের’ কারণে ১০টি ভালো কাজ মøান হয়ে যায়। রুলিং পার্টিতে আমাদের মতো দেশে একটি সমস্যা থেকেই যায়, সেটি হচ্ছে আগাছা-পরগাছা, এসব সুবিধাবাদী বেশির ভাগ সময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জাবি ভিসির দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল তো সবার পদত্যাগ দাবি করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। তিনি নিজেই নিজের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি নির্বাচনে জিতেও পদত্যাগ করেছেন। আবার কথা রাখতে পারেননি, ওই শূন্য জায়গায় নিজেই আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। এই দ্বিচারিতায় তাদের যে ভালো ভালো কথার দাম নেই। তারা নিজেরা বলে একটা, করে আরেকটা। তারা নিজেরাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নিজের দলের যখন গণতন্ত্রের সংকট, তারা দেশের গণতন্ত্র নিয়ে যখন কথা বলে তখন সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে হাস্যকরই মনে করবে। এ ছাড়া অন্যকিছু মনে করার কারণ নেই, বলেন কাদের।

আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হবে। সেটিকে সামনে রেখে সাংবাদিকরা দলের সাধারণ সম্পাদককে প্রশ্ন করেন। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাধারণ সম্পাদকের পদটি পার্টির সর্বোচ্চ পদধারীর নির্দেশেই চলে। এ ক্ষেত্রে অনেক প্রার্থী থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের সাধারণ সম্পাদক একবার হয়েছি, এটাই সম্মানের। সারাজীবন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই থাকতে চাই।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন, সভাপতি অপরিবর্তিত এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে। আরো কয়েকজনের নামও আসছেÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পার্টিতে আমাদের সভানেত্রী পার্টির সুপ্রিমো শেখ হাসিনা। আমাদের পার্টিতে বারবার যেটা হয় দলের কাউন্সিলরা সবসময় নেতৃত্ব নির্বাচনে নেত্রীর মনোভাবের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেন। জেনারেল সেক্রেটারি পদটি পার্টির সুপ্রিমোর নির্দেশনায় চলে। এখানে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে।’

তিনি বলেন, ‘নেত্রীর ইচ্ছার বাইরে আসলে কিছু হয় না। নেত্রী জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে যাকেই চয়েজ করেন আওয়ামী লীগের কর্মী-কাউন্সিলররা তার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। আমি ভাগ্যবান মানুষ; আমি আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি হয়েছি। অনেক কর্মী আজীবন ত্যাগ করেও এই পদটি পাননি। একবার হয়েছি এটাই বিরাট সম্মানের ব্যাপার।’

দায়িত্ব পালনে চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি এটুকু বলতে পারি, আমার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি ছিল না। অসুস্থ ছিলাম কিছুদিন। অসুস্থতার পরও আমি দল ও সরকারে সমানভাবে সময় দিচ্ছি। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমি নিজেকে এনগেইজড করছি। কাজেই আমি আবারও বলছিÑ এটা আসলে আমাদের সভাপতির ওপর নির্ভর করে, তিনি কাকে নেক্সট জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে পছন্দ করবেন, তিনি যাকে পছন্দ করবেন তার প্রতি আমাদের সবার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। তিন বছর পরপর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close