গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৬ মে, ২০১৯

বাংলাদেশকে ইইউ’র চাপ

ইউরোপ থেকে অবৈধদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তির আলোকে সরকারকে এটি করতে হচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে সরকার নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং ও পুলিশের বিশেষ বিভাগসহ একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইউরোপে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাসহ ভিনদেশি অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করায় ঢাকাকে এই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৬টি দেশেই অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসওপি চুক্তি অনুযায়ী এই অবৈধ অধিবাসীদের ফেরত নিতে বার বার ঢাকাকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ইইউর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সরকার এই প্রত্যাবাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যার বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটির লোকজন প্রাণ বাঁচাতে ইতালি ও গ্রিস হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব মতে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩০টি দেশের মধ্যে ১৬তম স্থানে।

অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তির আওতায় অবৈধ বাংলাদেশিদের ইউরোপে থাকার সুযোগ উঠে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।

অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে সম্প্রতি এনআইডি উইংয়ের সার্ভিস সংশ্লিষ্ট এপিআই সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২০ মে সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে, ইউরোপে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত না আনলে ইউরোপে অবস্থিত বৈধ বাংলাদেশিদের সমস্যা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এসওপির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জার্মানি, নরওয়ে, গ্রিস থেকে বেশকিছু অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। তবে সমস্যা তৈরি করছে পার্শ্ববর্তী দেশ যেমনÑ ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। তাদের অনেকেই এখন নিজের পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন।

তাই ইউরোপে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একটি ইন্টারফেস তৈরি করা হয়েছে। এটার সহায়তায় অবৈধদের তথ্য এনআইডি, ডিআইপি ও বিএমইটি, এপিআইয়ের (ডেটা ভার্সন) সংরক্ষিত ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখে নাগরিকত্ব নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে, যা এপিআই ও এসবির ইন্টারফেসের সঙ্গে সিক্রোনাইজ করে প্রস্তুত করা। এক্ষেত্রে অবৈধ বাংলাদেশির ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডব্লিউএসকিউ ফরমেটে এসবি কর্তৃক ইইউর কাছ থেকে সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। কমিশন আঙুলের ছাপ যাচাই করে এসবির কাছে ফিরতি তথ্য পাঠাবে। এই প্রক্রিয়ায় সময়সাপেক্ষ।

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮-১৫ সময়কালে মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে অনুপ্রবেশ করে। ২০১৬ সালে অনুপ্রবেশ করে আরো ১০ হাজার ৩৭৫ জন বাংলাদেশি। গত ২০১৭-১৮ সালে আরো কিছু অবৈধ বাংলাদেশির অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।

২০১৪ সাল থেকে অভিবাসীদের নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইইউ। দীর্ঘ সময় ধরে অনুপ্রবেশ করা এসব অবৈধ অভিবাসী মানব পাচারের শিকার। এদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে ইতালি হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। মানব পাচার ঠেকাতে এ পথটি বন্ধ করেছে ইইউ। এ পথে আসা বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক। সম্প্রতি লিবিয়া উপকূলের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে অনুপ্রবেশের আগে নৌকাডুবে বাংলাদেশের কয়েকজন মারা যায়। ফলে নতুন করে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জড়িত তারাও তৎপর হয়ে উঠেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close