নিজস্ব প্রতিবেদক ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

লাশ আসছে আজ

আর কখনো দাদার বাড়ি দেখা হবে না ছোট্ট জায়ানের

শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরে মা-বাবার সঙ্গে দাদার বাড়ি আসার কথা ছিল জায়ান চৌধুরীর (৮)।

সঙ্গে আসার কথা ছিল জায়ানের নানা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে ওর দাদাবাড়ি। নাতি বাড়ি আসবে সেই খুশিতে দাদা মতিনুল হক (এম এইচ) চৌধুরীও ঢাকা থেকে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। শুরু করেন বাড়ির সংস্কার কাজ। গাড়ি যাতে সহজে বাড়িতে আসতে পারে সেজন্য রাস্তায় নতুন মাটি ভরাট করেন। গ্রামের একে-ওকে নাতির আসার খবরটি দিয়েছেন। কিন্তু গত রোববার বিকেলে পাওয়া দুঃসংবাদে সব এলোমেলো হয়ে যায়। এদিকে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় গুরুতর আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী (প্রিন্স) নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুর শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি জানান, প্রিন্সের পায়ে ও পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি এখন ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন। নিহত নাতি জায়ানের জানাজার স্থান পরিদর্শন শেষে গতকাল মঙ্গলবার শেখ সেলিম এ কথা জানান।

শেখ সেলিম বলেন, মশিউল হক চৌধুরীর কিডনি ও লিভারে স্লিন্টার রয়েছে। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। দুই সপ্তাহের আগে তাকে স্থানান্তর করা যাবে না।

শ্রীলঙ্কায় গত রোববার একযোগে তিনটি হোটেল ও তিন গির্জায় বোমা হামলা হয়। পরে আরো দুটি স্থানে বিস্ফোরণ হয়। এতে গতকাল পর্যন্ত ৩২১ জন নিহতের খবর আসে। ওই হামলায় জায়ান চৌধুরীও নিহত হয়। জায়ান আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি। হামলায় আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

ভাটিপাড়া গ্রামে জায়ানের দাদা এম এইচ চৌধুরীর বাড়িটি এলাকায় ‘জমিদার বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত। তাদের পূর্বপুরুষ এলাকার জমিদার ছিলেন। বিশাল বাড়িটি বেশ পুরোনো। বাড়ির বেশির ভাগ ঘর খালি পড়ে আছে। পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগ থাকেন ঢাকায়। মাঝে মধ্যে কেউ বেড়াতে আসেন। গতকাল দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে দেখা হয় বৃদ্ধ আবু নোমান চৌধুরীর সঙ্গে। ঘরের বারান্দায় মনমরা হয়ে বসে ছিলেন। তিনি এম এইচ চৌধুরীর চাচাতো ভাই, শিশু জায়ানের সম্পর্কে আরেক দাদা। জায়ানের প্রসঙ্গ তুলতেই কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘বড় ভালো ছেলে ছিল জায়ান।’

আবু নোমান চৌধুরী বলেন, এবার মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামে আসবে। সেই সঙ্গে তার নানা শেখ সেলিম সাহেবেরও আসার কথা ছিল। সেজন্য জায়ানের দাদা ২০ দিন আগে গ্রামে আসেন। বাড়িঘরের টুকটাক কাজ করান। বাড়ির সমানের রাস্তায় নতুন মাটি ফেলেছেন।

আবু নোমান বলেন, ‘জায়ান এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল, এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তারা কেন আমার নিষ্পাপ নাতিকে মারল। তার কী দোষ ছিল। প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই, দেশ নাই।’

এম এইচ চৌধুরীর আরেক চাচাতো ভাই কাইজার চৌধুরী থাকেন যুক্তরাজ্যে। তিনি সম্প্রতি দেশে ফিরে সুনামগঞ্জে নিজ বাড়িতে এসেছেন। কাইজার চৌধুরী বলেন, রোববার বিকেলে বড় ভাই এম এইচ চৌধুরীর সঙ্গে ঘরের বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন। এমন সময় তারা খবরটি পান। সঙ্গে সঙ্গে ভাইকে ঢাকা পাঠান। কাইজার চৌধুরী বলেন, ভাতিজা মশিউল হক চৌধুরী (প্রিন্স), তার স্ত্রী শেখ আমিনা সুলতানা সোনিয়া এবং তাদের দুই ছেলে জায়ান চৌধুরী ও জোহান চৌধুরী শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে জায়ান বড়। সে কখনো দিরাইয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেনি। দাদার বাড়ি আর দেখা হলো না তার।

ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৈদুর রহমান তালুকদার বলেন, নাতি জায়ান চৌধুরী এবার গ্রামে আসবে, এই খবর দাদা এম এইচ চৌধুরী সবাইকে জানিয়েছিলেন। তিনি বেশ খোশমেজাজে ছিলেন। রাস্তাঘাটের কাজ করিয়েছেন। কিন্তু দাদার সেই আশা আর পূরণ হলো না। জায়ানের মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকার মানুষ কষ্ট পেয়েছে।

জায়ানের জানাজার বিষয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ বলেন, বুধবার দুপুর ১টায় লাশ পৌঁছবে। আসরের নামাজের পর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জানাজা হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close