পার্থ মুখোপাধ্যায় কলকাতা থেকে

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

এক-তৃতীয়াংশ সদস্য বদলাচ্ছে বিজেপি

নরেন্দ্র মোদি তিনি নিজেকে যতই দেশের চৌকিদারের বলুক না কেন, এবারের নির্বাচন যে বিজেপির কাছে খুব কঠিন লড়াই হতে যাচ্ছে, তা লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই থেকে পরিষ্কার। গো-বলয়ের তিন রাজ্যে ক্ষমতা হাতছাড়া হলেও ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি প্রার্থী বাছার ক্ষেত্রে চরম সতর্ক। দলীয় কোন্দল ও অন্যান্য সমস্যার কথা মাথায় রেখে দলের এক তৃতীয়াংশ বর্তমান সংসদ সদস্যদের টিকিট নাও দিতে পারে বিজেপি। এমনটাই জানা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন এমন ৭১ সংসদ সদস্যকে আর টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। আরো ২৬ জন রয়েছেন এই তালিকায়। সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে। সবমিলিয়ে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে বর্তমান সংসদ সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। এল কে আদভানির মতো প্রবীণ নেতাকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দেখে-শুনে আগ বাড়িয়ে লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর প্রার্থী হবেন না। বিজেপির এক অংশের ধারণা, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি হাওয়ায় ভর করে জিতে গিয়েছিলেন বহু প্রার্থী। তাদের অনেককেই এবার বাদ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইস্যু ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বুঝে এবার টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বহু সংসদ সদস্যকে। এবার লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মোট ৪০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে বিজেপি। বাকি আসনে লড়াই করবে এনডিএ শরিকরা। তবে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে এবার দেখা হচ্ছে কোনো প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কতটা, তার বিরুদ্ধে দলে কোনো অসন্তোষ রয়েছে কি না। এতটাই সাবধানতা অবলম্বন করছে এই দল। অন্যদিকে, ১১ এপ্রিল প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ হবে দেশের ৯১টি কেন্দ্রে। এরই মধ্যে ওইসব কেন্দ্রের প্রার্থীরা হলফনামা দিয়ে নিজেদের ‘জীবনপঞ্জি’ পেশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। প্রথম দফায় লড়ছেন ১২৭৯ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১২৬৬ জন প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)। তাদের ওই রিপোর্টে জানা যায়, প্রথম দফার প্রার্থীদের মধ্যে ২১৩ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। ভাবি জনপ্রতিনিধিরা কী অভিযোগ অভিযুক্ত? খুন, অপহরণ, শ্লীলতাহানির মতো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। রিপোর্ট বলছে, ১২৬৬ জনের ১২ শতাংশ প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলছে কেউবা নিম্নআদালতে দোষী সাব্যস্ত। ১০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রয়েছে। ২৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের প্রচেষ্টা, চারজনের বিরুদ্ধে অপহরণ, ১৬ জনের বিরুদ্ধে নারী সংক্রান্ত অপরাধ এবং ১২ জনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের ৮৩ প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপির ৮৩ জনের মধ্যে ৩০, বিএসপির ৩২ জনের মধ্যে আট, ওয়াইএসআরসিপির ২৫ জনের মধ্যে ১৩, টিডিপির ২৫ জনের মধ্যে চার এবং টিআরএস’র ১৭ জনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা।

কলকাতার কমিশনার বদল, তীব্র আপত্তি মমতার : ভোটের মুখে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারদের বদলিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির ঘটনায় কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের এভাবে হঠাৎ করে বদলির সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কলকাতা ও বিধাননগর দুই পুলিশ কমিশনার ও দুই জেলা পুলিশ সুপারের বদলি ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে বদলির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে, কার নির্দেশে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা তদন্ত করে দেখারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। এর আগে গত শুক্রবার রাতেই কলকাতা পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অনুজ শর্মাকে সরিয়ে নতুন নগরপাল করা হয় রাজেশ কুমারকে। উল্লেখ্য, রাজীব কুমাকে সরিয়ে অনুজ শর্মাকে কলকাতা পুলিশ কমিশনার পদে মাত্র দুই মাস আগেই নিয়োগ করা হয়েছিল। একইসঙ্গে বদলি করা হয়েছে কলকাতা লাগোয়া বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংকেও। তার জায়গায় বিধাননগর পুলিশের কমিশনার করা হয়েছে নটরাজন রমেশ বাবুকে। কমিশন সূত্রে খবর, কলকাতা ও বিধাননগর এই দুই পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। পাশাপাশি, বীরভূমের পুলিশ সুপার ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপারের পদেও বদলি করা হয়েছে। বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার হয়েছেন আভান্নু রবীন্দ্রনাথ। আর ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার করা হয়েছে শ্রীহরি পান্ডেকে। বদলির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব অফিসারকে পদ থেকে সরানো হয়েছে, তারা নির্বাচনের কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে, কলকাতার সদ্য সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরার জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সিবিআই। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না। সেই নির্দেশ প্রত্যাহারের আর্জি নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে সিবিআই। প্রসঙ্গত, সারদা চিট ফান্ড কা-ের তদন্তে সিট গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। সেই সিটের প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার। সিবিআইর অভিযোগ, সিটের প্রধান থাকাকালীন সারদা দুর্নীতির অনেক তথ্য-প্রমাণ নষ্ট ও বিকৃত করেছেন রাজীব কুমার। কলকাতা পুলিশ বনাম সিবিআই দ্বন্দ্বে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আদালত অবমাননার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। শীর্ষ আদালত তখন রাজীব কুমারকে তদন্তে সহযোগিতার জন্য নির্দেশ দেন। নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে শিলংয়ে সিবিআই-এর মুখোমুখি হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে। এরপর শিলংয়ে টানা আট দিন রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই তদন্তকারী অফিসারদের দল। জিজ্ঞাসাবাদের পর মুখবন্ধ খামে সেই রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে জমা দেয়। সিবিআই সূত্রে খবর, সেই রিপোর্টে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close