হাসান ইমন

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মেট্রোরেলের সঙ্গে মিল রেখে নতুন রূপে আসছে পান্থকুঞ্জ

* পার্কের সংস্কারকাজ স্থগিত * এক্সপ্রেসওয়েতে যাবে ২০ শতাংশ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা মেট্রোরেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বদলে যাবে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক। এজন্য পার্কটি তৈরিতে নতুন করে নকশা করা হচ্ছে। নতুন নকশা অনুযায়ী মূল পার্কের ২০ শতাংশ যাবে এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণে। বাকি ৮০ শতাংশে মূল পার্কটি তৈরি করা হবে। বর্তমানে পার্কটির সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।

পার্কটির নকশা তৈরি করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান সাতত্য। জানতে চাইলে সাতত্যের প্রধান স্থপতি রফিক আজম বলেন, পার্কটি তৈরিতে আগে যে নকশা করা হয়েছিল সেটি আবার নতুন করে করা হবে। কারণ পার্কের পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার রাস্তা তৈরি করা হবে। এতে মূল পার্কের ২০ শতাংশ এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার রাস্তা নির্মাণে চলে যাবে বাকি ৮০ শতাংশে মূল পার্কটি তৈরি করা হবে। এসব কারণে পার্কটির নির্মাণ কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। কারণ এখন যদি আমরা কাজ করি তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা নির্মাণের সময় আমাদের কাজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক কিছু ভেঙে ফেলতে হবে। জানা গেছে, নতুন নকশা অনুসারে পার্কটিতে সীমানা দেয়াল থাকবে না। এখানে স্থাপন করা হবে একটি উন্মুক্ত ক্যাফেটেরিয়া ও গ্রন্থাগার। থাকবে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান। পার্কটি যাতে নারী-পুরুষ-শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে, নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। পরিবর্তন প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছু গাছ কাটতে হবে তবে ছোট বড় পাঁচ শতাধিক গাছ বাঁচানোর চেষ্টা থাকবে।

রাজধানীকে বসবাসের যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা নগরীর ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে পান্থকুঞ্জ পার্কটি তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ১৫.১৩ বিঘা জমিতে নির্মিত পান্থকুঞ্জ পার্কটির ভেতরে থাকবে পাবলিক টয়লেট, উন্মুক্ত জিমনেশিয়াম, লাইব্রেরি, রেস্টুরেন্ট, ওয়াসা কন্ট্রোল রুম, ওয়াকওয়ে, ফুলের বাগান ইত্যাদি।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত্বাবধানে থাকা পান্থকুঞ্জ পার্কটি আশির দশকের শেষে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্থান্তর করা হয়। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পার্কটির দায়িত্বে ছিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পার্কটির সংস্কার কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। এরপর এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা নির্মাণের জটিলতায় নভেম্বরে পার্কের কাজ স্থগিত করা হয়।

এর আগে গত বছরের ১২ জুলাই দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে বসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তাদের জানিয়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে জনদুর্ভোগ লাঘব এবং পরিচ্ছন্ন নগরী করতে আরো দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য জনগণের দৃষ্টির ভেতর থাকা পান্থকুঞ্জ এবং আনোয়ারা পার্ককে পরিচ্ছন্ন করে চলাচল উপযোগী করতে হবে।

এত দিন মেগা প্রকল্পের কথা বলে পান্থকুঞ্জ পার্কে কোনো কাজই করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৩ জুলাই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করে দেয় তারা। দুই দিন অভিযান চালিয়ে পান্থকুঞ্জ পার্ক চকচকে, ঝকঝকে করে তোলে। ময়লার দুর্গন্ধে যে পার্কে মানুষ ঢুকতে পারত না সেখানে এখন বসে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছে অনেকে।

কিছুদিন আগেও পান্থকুঞ্জ ত্রিভুজাকৃতির পার্কটি ছিল ছিনতাই ও মাদক সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের আখড়া। এখন সেখানে বেড়ানোর পরিবেশ কিছুটা ফিরে এসেছে। সরেজমিন দেখা যায়, পার্কের হাঁটাপথের আশপাশে জমে থাকা ময়লার স্তূপগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। ভেতর ও চারপাশের ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান মানুষের বসতি কিংবা অবৈধ স্থাপনাগুলো নেই। বসার বেঞ্চ ও ছাউনিগুলো ঝকঝকে। পার্কের কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ সংলগ্ন অংশে অস্থায়ী টিনের বেড়া লাগানো রয়েছে। ভেতরের বিভিন্ন অংশে গজিয়ে ওঠা ঝোপগুলো নেই। জলকাদায় মাখা হাঁটার পথগুলো এখন পরিচ্ছন্ন। প্রতিটি গাছের গোড়ায় রঙ করে বসানো হয়েছে ক্রমিক নম্বর।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পান্থকুঞ্জ পার্কটির সংস্কার নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। তাদের অনুরোধে আপাতত কাজ স্থগিত করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close