জুবায়ের চৌধুরী

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

উপজেলা ও ডিএনসিসি মেয়র নির্বাচন

দুটিতেই চোখ আ.লীগের বিএনপি এখনো নীরব

আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তোড়জোর শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের এক রায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন অনুষ্ঠানেরও বাধা কেটে গেল। তাই পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনের মধ্যেই ডিএনসিসির উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন দুই ফরমেটের নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয়ের লক্ষ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তবে জাতীয় নির্বাচনে ‘ভরাডুবির’ পর উপজেলা ও ডিএনসিসির উপনির্বাচন নিয়ে এখনো নীরব টানা একযুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর এবার উপজেলা নির্বাচনেও একই ধরনের ফল পাওয়ার আশায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকেই দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। আর উপজেলা এবং ডিএনসিসির উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে ভেবেই প্রার্থী বাছাই করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে এবারের সংসদ নির্বাচনে বঞ্চিত তৃণমূল নেতারাই অগ্রাধিকার পাবেন। তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে এবং দ্বন্দ্ব নিরসন করে একক প্রার্থী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। তফসিলের আগেই তৃণমূলে যাবে কেন্দ্রের টিম। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে সক্রিয় থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রথমবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে জোটে নয়, দলীয়ভাবেই অংশ নেবে ক্ষমতাসীনরা।

এদিকে মার্চ থেকে উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছেন। দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ওই নির্বাচন বর্জন করার চিন্তাভাবনা করছে তারা।

জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং দলের নাজুক পরিস্থিতিতে এই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত হবে না বলে হাইকমান্ডকে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। বিএনপি ও জোটের বেশিরভাগ নেতারা এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন। বিএনপির তৃণমূলের আশঙ্কা, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আবারও নতুন করে হামলা-মামলায় পড়বে দলটির নেতাকর্মীরা। এ দুটি নির্বাচনে অংশ নিলে সংসদের পুনর্নির্বাচনের দাবিও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির মতে, সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে বারবার ঘোষণা দিলেও নির্বাচনে ভয়াবহ কারচুপি হয়েছে। ফলে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা নেই তাদের। অংশ নিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দিতে চান না জোট নেতারা। দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার কিংবা ও না যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়নি। তবে জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের ঘোর এখনো কাটেনি। ক্ষমতাসীনদের ভোট ‘কারচুপি’ বিষয় নিয়েই এখনো তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সময় হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে জোটের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাও বর্জনের পক্ষে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি জোট।

সদ্য শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচনে দুটি প্রধান জোটের ৮ হাজারেরও বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কমে আসে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সহ¯্রাধিক। এখনো ফরম কিনছেন অনেকে। তাই প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে এবার উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন কেনার হিড়িক পড়তে পারে। এক উপজেলায় একাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এবার বেশ কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলেও তাদের কাউকেই দেওয়া হয়নি। তবে ওই প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইলে বঞ্চিত হবেন না বলে নীতিনির্ধারক নেতারা নিশ্চিত করেছেন। অন্যসব উপজেলায় দলীয় মনোনয়নের বেলায় নানামুখী হিসাব-নিকাশ এবং প্রার্থীদের যোগ্যতার পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টির চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। সেক্ষেত্রে পরপর দুই দফায় বিজয়ীদের আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী উপজেলা নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী থাকবেন। বিদ্রোহী হলেই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলা কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো যোগ্য ও জনপ্রিয়দেরই উপজেলায় মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় সরকার আইনে (উপজেলা পরিষদ) বলা রয়েছে, উপজেলা পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাব অনুযায়ী, যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ আগে পূর্ণ হবে, প্রথম পর্যায়ে সেসব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর মার্চে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপজেলা নির্বাচনের জন্য উপযোগী হবে। সে অনুযায়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা ও রমজান মাসের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণ শুরু করা হবে। এ লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। আট বিভাগের উপজেলাগুলো চার দিনে চার ধাপে ভোট করা হবে। বাকিগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কবে হচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে আরেকটি ধাপে ভোট শেষ করা হবে। সেক্ষেত্রে পাঁচ ধাপে ভোট করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯৪টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে।

এবার উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানÑ এ তিনটি পদে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। গত উপজেলা নির্বাচনে বেশিরভাগ এলাকাতে বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে তাদের দেড় শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান হন দুই শতাধিক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close