সংসদ প্রতিবেদক

  ০৩ জানুয়ারি, ২০১৯

আজ নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের এমপিদের শপথ নেওয়া অনিশ্চিত * বিজয়ীদের গেজেট সংসদে পাঠিয়েছে ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিরা আজ বৃহস্পতিবার শপথ নিচ্ছেন। এ দিন বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সংসদ ভবনের নিচতলায় শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নবনির্বাচিতদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এর আগে দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথমে নিজেই নিজের শপথ নেবেন; পরে অন্যদের শপথ পাঠ করাবেন। এই শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা বসবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রথমে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা শপথ নেবেন। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এ দলের সদস্য থাকায় কয়েক দফায় সরকারি দলের সদস্যরা শপথ নেবেন। পরে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের নির্বাচিতরা শপথ নেবেন। তবে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন কিনা সংসদ সচিবালয় তা নিশ্চিত করতে পারেননি। এর আগে দল ও জোটের পক্ষ থেকে শপথ না নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, শপথ পড়ানোর বিষয়ে সংবিধানে ১৪৮-এর ২(ক)-তে বলা হয়েছে, ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি যে কোনো কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’

এদিকে, এ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে নবনির্বাচিত এমপিদের গেজেট গতকাল বুধবার সংসদ সচিবালয়ে পাঠায়। ইসির সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিজয়ীদের গেজেট জারি করেছিল কমিশন।

আর শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই এ শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি গণমাধ্যম থেকে সর্বোচ্চ দুজন শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অনুমোদিতদের অবশ্যই পিআইডির (অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড) পাস থাকতে হবে।

এদিকে, শপথ উপলক্ষে সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়েছে। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এতে শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে সংসদের। কারণ গত ২৮ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন বসেছিল। এ উপলক্ষে স্পিকার গতকাল সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিফিং করেন; কোন কর্মকর্তার কি দায়িত্ব। নতুন এমপিদের শপথ শেষে সংসদের পক্ষ থেকে আপ্যায়নও করানো হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার শপথ নিলেও ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবনির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৯ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সরকারিভাবে ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে।

অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে নতুন সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আজ ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিকে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) দেশের ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি ফল অনুযায়ী এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৬৬টি আসন। লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে ২০টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি ৭টি আসন এবং অন্যরা ৪টি আসনে জয়লাভ করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এর আগে ৯ জানুয়ারি এমপিদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়তে চলেছেন। নতুন সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ এবং শপথ গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন শেখ হাসিনা। এরপর গঠন করা হবে নতুন মন্ত্রিসভা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close