প্রিন্স রাসেল

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮

হোপে ভাঙল জয়ের আশা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ চেনা মুখ। বর্তমান দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তারা। টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের বুঝতে বেগ পাওয়ার কথা নয়। সেই পঞ্চপা-ব মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, তামিম এবং মুশফিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কালকের ম্যাচটা এই পঞ্চমুখের ছিল একসঙ্গে খেলা শততম ওয়ানডে। দিনটা ভুলে যেতে চাইবেন তাদের প্রত্যেকেই। হারা ম্যাচের স্মৃতি কেই বা মনে রাখে!

কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪ উইকেটে হেরে গেছে। ২৫৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়েও আগলে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। ২ বল হাতে রেখেই উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচটা জিতে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। নাটকীয় এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরল সফরকারী দলটি। আগামী পরশু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেই তাই নির্ধারণ হবে সিরিজের ভাগ্য।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সিরিজ জয়ের যে আশা নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ সেটা ভেঙে দিয়েছেন শাই হোপ। কাল এই ক্যারিবীয়র দুর্দান্ত শতকই সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৪৪ বলে ১৪৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বাতিঘরে পৌঁছে দিয়েই ২২ গজ ছেড়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার। অবধারিতভাবে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতিটাও উঠেছে তার হাতে।

জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৩২ রান। ৬ বলে সেটা নেমে ছয়ে। রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানের খরচে দুটি ওভারই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ ওভারে দারুণ কিছু

করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওভার শেষ হওয়ার আগেই জয়োৎসবে মেতে ওঠে ক্যারিবীয়রা।

ম্যাচ শুরুর হাসিটাও ছিল তাদের মুখে। মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াইয়ে সিরিজে টানা দ্বিতীয়বার হেরে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবার ব্যাটিং নয়, সতীর্থ কেমার রোচের হাতে বল তুলে দেন ক্যারিবীয় দলপতি রভম্যান পাওয়েল। ¯্রােতের বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা। শুরুতেই খেতে হয় ধাক্কা।

সেটা উইকেট পতনের নয়, লিটন দাশের ইনজুরিতে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে ওশান থমাসের ইয়র্করটা গিয়ে আঘাত হানে ডানহাতি ওপেনারের পায়ে। অ্যাঙ্গেলে চোট নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে এক্স-রে করাতে যেতে হয় লিটনকে। বড় কোনো সমস্যা হয়নি তার। স্বস্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন লিটন। দ্বিতীয়বার ব্যাট করতেও এসেছেন ২২ গজে। কিন্তু কিছু করতে পারেননি তিনি। ৮ রানেই বিদায় নিতে হয় তাকে।

একাদশে থাকা অন্য দুই ওপেনারও হতাশ করেছেন। ইমরুল কায়েস দলীয় ১৪ রানে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরলে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ধাক্কাটা প্রায় সামলে নিয়েছেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল; করেছেন ৫০ রান। এই ইনিংস খেলার পথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিককে নিয়ে বাঁ-হাতি ওপেনার গড়েন ১১১ রানের জুটি। এই জুটিই বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের ভিতটা গড়ে দিয়েছে। তামিমের বিদায়ে ভাঙে কার্যকর ও বিপদ সামলানো জুটিটা।

আগের ম্যাচের মতো এবারো নিষ্প্রভ থাকলেন সৌম্য সরকার। ৮ বলে ৬ রানে বিদায় নিয়েছেন সৌম্য। তার মতো দুই অংকে যেতে পারেনি আরো তিনজনÑ মাশরাফি, লিটন এবং ইমরুল। শেষের জন তো ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। স্লগ ওভারে রান তোলার সুযোগ এসেছিল বোলার মাশরাফি ও মিরাজের সামনে। কিন্তু দুজন মিলে ২১ বল খরচ করে অজেয় থাকলেন মাত্র ১৬ রানে! অধিনায়ক মাশরাফি তো স্বাভাবিক ব্যাটিংটাই করতে পারেননি। গ্যালারি থেকে ভেসে আসা ‘নৌকা নৌকা’ চিৎকার যেন এলোমেলো করে তুলছিল ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কে।

বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৫০ ছাড়িয়ে পঞ্চপা-বের তিনজনের সৌজন্যে। তামিম পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম অর্ধশতক। সাকিব ৪০ এবং মুশফিক তুলে নিয়েছেন ৩২তম হাফসেঞ্চুরি। এই তিন ফিফটি অবলম্বনে বোলাররা পেয়েছেন চ্যালেঞ্জিং স্কোর। কিন্তু সেটা আগলে রাখতে পারেননি মাশরাফিরা। স্পিনাররা তাদের দায়িত্বটা যথাযথ পালন করেছেন। তিন পেসার মাশরাফি, রুবেল এবং মুস্তাফিজ পারেননি। বল উদার ছিলেন এই ত্রয়ী। তবে ক্যারিবীয়দের পতন হওয়া ৬ উইকেটের ৫টি নিয়েছেন তারাই। মুস্তাফিজ এবং রুবেলের শিকার ৪টি। আগের ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার মাশরাফির শিকার একটি। খালি হাতে ফেরেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। সাকিব উইকেট না পেলেও বল হাতে সবচেয়ে মৃতব্যয়ী তিনিই ছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরুতে অবশ্য আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। মাত্র ৫ রানে চন্দরপল হেমরাজকে সাজঘরে পাঠান মিরাজ। শুরুর এই উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিক শিবির। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৫, পরেরটিতে ৬২ রানের জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটি জুটিতেই নেতৃত্ব দিয়েছেন শাই হোপ। দুই অভিজ্ঞ ড্যারেন ব্রাভো এবং মারলন স্যামুয়েলস তরুণ সহযোদ্ধাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন। ২৭ রানে ফিরেছেন ব্রাভো। ২৬ রান এসেছে স্যামুয়েলসের ব্যাট থেকে।

একপ্রান্ত অটুট রেখে ক্যারিবীয়দের জয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়িয়েছেন হোপ। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। তবু থামেনি হোপের ব্যাট। চওড়া হয়েছে ক্রমেই। ১২টি চার ও তিনটি ছক্কায় রাজসিক ইনিংসটার সুন্দর একটা সমাপ্তি টানেন তিনি। অন্যপ্রান্তে ৩১ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থেকে কিমো পল নির্ভার করেছেন হোপকে।

অথচ এই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। মাশরাফি ছুঁয়েছেন ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া হাবিবুল বাশারকে (৬৯)। কিন্তু দলের পরাজয়ের সামনে এসব ব্যক্তিগত অর্জন স্রেফ ম্লান হয়ে গেল।

বাংলাদেশ ২৫৫/৭

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৫৬/৬

ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close