নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

কবিতা খানম বললেন

মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সাংঘর্ষিক ও অযৌক্তিক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সদ্য হয়ে যাওয়া প্রাক-প্রস্তুতি সভায় (এজেন্ডার বাইরে) নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তবে এতে ইসিতে অনৈক্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।

তিনি বলেছেন, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন ইসির অধীনে থাকবে যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক; কারণ এটি ওই সময়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের আওতাধীন থাকে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা সময়োযোগী নয়। কেননা এ নিয়ে এখনো আলোচনার সময় আসেনি; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় এই প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল। তাই বলা যায়, এই প্রস্তাবটি অযৌক্তিক।

নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের অফিস কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এসব কথা বলেন।

কবিতা খানম আরো বলেন, তার প্রস্তাব যেন সভায় না ওঠে সে জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনঅফিসিয়াল নোট (ইউও নোট) দেন অপর তিন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। গত মঙ্গলবার তারা একসঙ্গে মাঠ কর্মকর্তাদের ৫ দফা নির্দেশনা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় একমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দুদিন আগের এ ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন কবিতা খানম।

তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা সভায় আলোচনার সুযোগ ছিল না। একজন কমিশনার কমিশনের সভায় প্রস্তাব দিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নে কবিতা খানম বলেন, আমি পাঁচটি প্রস্তাবই দেখেছি। প্রথম ছিল যে সেনা বাহিনীকে কীভাবে রাখব। সে বিষয়ে আলোচনার সময় এটা নয়। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে এমপিদের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আচরণবিধি মালায় সাধারণ ও অল্প কিছু সংশোধন হচ্ছে। আচরণবিধি-মালায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুই ও এমপি সবার কথাই বলা আছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোনো প্রকার প্রচারণা করতে পারবে না। আমাদের এই জায়গায় কোনো কাজ করা প্রয়োজন আছে বলে আইন সংস্কার কমিটি মনে করছে না।

তিনি বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় বলা আছে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরশনের মেয়র, স্পিকারসহ অন্যরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের সুবিধা নিয়ে প্রচারণায় যেতে পারবেন না। সংসদ সদস্যরা যে গাড়ি, তেল পান, সে সুযোগও ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী পারবেন।

কবিতা খানম বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য হিসেবে বিশেষ আইনে নিরাপত্তা সুবিধা পান। সে জন্য বিশেষ আইনের নিরাপত্তা সুবিধা নিয়ে তিনি প্রচারণায় প্রটোকলের সুবিধা পাবেন। তবে অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা তিনি পাবেন না। বিশেষ আইনে যতটুকু পারমিট থাকবে, নিরাপত্তার জন্য যে সুযোগ আছে, ততটুকু তিনি নিতে পারবেন।

বাক-স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্য ও সভা বর্জন প্রসঙ্গে কবিতা বলেন, আমি মনে করি না যে, এর মাধ্যমে কোনো অনৈক্য তৈরি হয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট যে কেউ যেকোনো সময় দিতে পারেন। আমি বলব যে এটা একটা প্র্যাকটিস; এটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং এখানে ৫ জন মিলেই একটা বডি। যেকোনো মেম্বর যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত দিতে পারেন। মনে করি না যে, মতবিরোধের কারণে কমিশনে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। যেকোনো একটা বিষয়ে মতবিরোধ বা নোট অব ডিসেন্ট আমিও দিতে পারি।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন বিষয়ে বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন সংবিধানকে সামনে রেখে সংবিধান অনুযায়ী, কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে সংসদ বহাল থাকবে না কি থাকবে এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী, কার্যক্রম পরিচালনা করবে এটাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close