নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ আগস্ট, ২০১৮

রাজধানীর পশুর হাট

ছোট ও মাঝারি গরুতে ক্রেতাদের নজর বেশি

রাজধানীর পশুর হাটে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন হাটে চলছে পশু বেচাকেনা। হাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা গরুর দাম এখনো অনেক বেশি চাচ্ছেন। অপরদিকে বেপারিরা বলছেন, গরু কেনায় দাম বেশি পড়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর হাটগুলোতে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা জমে উঠেছে। হাটে আসা ক্রেতারা কেউ খালি হাতে ফিরছেন না। সবার হাতেই কোরবানির পশু। তবে এবার ছোট ও মাঝারি গরুতে নজর বেশি ক্রেতাদের। আফতাব নগর বাজার থেকে গরু কিনেছেন গ্রিন রোডের আলীম উদ্দিন।

তিনি জানান, গত দুই দিন ধরে বেপারিরা দাম না ছাড়লেও আজ সকাল থেকে একটু কমিয়েছেন। ফলে ক্রেতাদের কিছুটা সাধ্যের মধ্যে এসেছে পশুর বাজার। এর আগে দুই দিন ধরে যে গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল আজ (সোমবার) সকালে তা ১ লাখ টাকায় কিনেছি। আজ (গতকাল) সকাল থেকে বেপারিরা পশুর দাম অনেকটা কমেছে। গরু কিনে তিনি সন্তুষ্ট। দাম ছিল হাতের নাগালেই।

রাজধানীর হাজারীবাগ বাজারে গিয়েছিলেন কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা বাঁধন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) চাকরি করেন তিনি। ছুটিতে ঢাকায় এসেছেন। হাজারীবাগ হাট থেকে ৬৩ হাজার টাকায় পছন্দের গরুটি কিনতে পেরে তিনি খুব খুশি। এই সরকারি চাকুরে বলেন, কোরবানির পশুর বাজার এখন মোটামুটি ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে আছে।

হাজারীবাগ হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকেই পশু বেচাকেনা জমে উঠেছে। এ হাটে ছাগলও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম চাওয়া হচ্ছে বেশি। ১০ কেজি মাংস হবে বিক্রেতারা এমন ছাগলের দাম হাঁকছেন ১২ হাজার টাকা। জিগাতলার আফু নামের একজন একটি ছাগল ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। এটা কিনতে পেরে তিনি বেশ খুশি।

মোহাম্মদপুরের বছিলা পুলিশ লাইন পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও প্রচুর গরু বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকেই ক্রেতারা কোরবানির পশু কেনার জন্য হাজির হয়েছেন। হাটের ইজারাদারদের একজন ইস্রাফিল হোসেন বলেন, আমাদের এ হাটে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছে। পশু বেচাকেনা করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই খুব খুশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে উদ্দেশে হাট ইজারা নিয়েছি আশা করি আমরা সফল হব।

হাটে পর্যাপ্ত পশু, দাম বেশি ক্রেতা কম : রাজধানীর হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত পশু। কিন্তু এত পশুর বিপরীতে সেই পরিমাণ ক্রেতা নেই। তাই বেপারিরা একটু হতাশ। রাজধানীর অন্যতম বড় হাট গাবতলীর হাট। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারিরা তাদের গরু নিয়ে এসেছে। আর ক্রেতারাও হাটে হাটে ঘুরে গরু দেখে যাচ্ছেন। দাম যাচাই করছেন কিন্তু কিনছেন না। এদিকে গরুর দামও কমাচ্ছেন না বেপারিরা।

পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, কোরবানি উপলক্ষে স্থায়ী এই হাট নির্দিষ্ট জায়গা ছাপিয়ে আশপাশে বিস্তৃত হয়েছে। বেশ অনেকখানি জায়গাজুড়ে রাখা হয়েছে কোরবানির পশু। বেড়িবাঁধের পাশেও কিছু কিছু গরু দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে দেশি গরুর পরিমাণ বেশি। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। বেপারিরা সবাই নিজেকে খামারি বলে দাবি করেছেন।

নাটোর থেকে ফজলে রাব্বি ১৪০টা গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি প্রতি বছরই গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে আসেন। এই বছর দুই দিন হয়ে গেছে হাটে আসা। এই পর্যন্ত ৩০টা গরু বেচা হয়েছে। দাম গত বছরের থেকে বেশি। কারণ গোখাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। তিনি জানান, গরু আনার সময় পথে তার কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো বাধারও শিকার হননি।

গাবতলীর হাটে গরু কিনতে এসেছেন আবদুস সোবহান। তিনি বললেন, হাটে কোরবানির পশুর দাম বেশ চড়া। তাই আজ দেখে গেলাম। কাল পরশু আবার আসব। তারপর দাম যাই হোক না কেন কিনতেই হবে। তবে এবার সব থেকে ভালো বিষয় হচ্ছে কোনো ভারতীয় গরু নেই। সব দেশীয় খামারের গরু। তাই এবার দেশীয় খামারিরা বেশি লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন, মাঝারি আকারের এক গরুর দাম ১ লাখ টাকা চেয়েছেন। কয়েকজন ক্রেতা গরুটিকে দেখে গেছেন। দামে বনিবনা হয়নি বলে ক্রেতারা কেনেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে গরুটির দাম ৭০ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

এদিকে বেপারি আবদুর জব্বার বললেন, ১ লাখ টাকার কমে তিনি গরুটি বিক্রি করবেন না। তিনি এই দামেই বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করবেন। যদি এই দাম না পান তাহলে বিক্রি না করে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন। ঝিনাইদহ থেকে ১৩০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন নাসের মিয়া। তিনি এখনো ছাগলের ক্রেতা পাননি। সবাই দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দাম চাচ্ছি দেশি ছাগলের। আর রামছাগলের দাম একটু বেশি। এক জোড়া রামছাগলের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাচ্ছেন। তবে সামান্য লাভ রেখে সব ছাগল বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা আছে।

গাবতলী পশুর হাটে আমজাদ বেপারি পাকিস্তান থেকে উট নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে উটের একটি বাচ্চাও নিয়ে এসেছিলেন। হাটে আসার আগেই সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। বাচ্চা উটটি ৬ লাখ দামে বিক্রি করা হয়েছে। বড় উটটি ২২ লাখ দাম চেয়েছেন। এ পর্যন্ত ১২ লাখ দাম উঠেছে। আর দুম্বা জোড়ার দাম চেয়েছি ৭ লাখ টাকা।

শেষ দিনের ‘ফাঁদ’ এড়াতে সতর্ক ক্রেতা-বিক্রেতারা : রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। সে হিসেবে আজ মঙ্গলবার কোরবানির হাটের শেষ দিন। এ দিনে এসে কখনো কোরবানির পশু না পেয়ে দড়ি কিনেই বাড়ি ফিরতে হয় ক্রেতাদের, আবার কখনো পানির দামে প্রিয় পশুটি বিক্রি করে চোখের জলে ভাসেন বেপারিরা। তাই এবার আর শেষ দিনের ‘ফাঁদে’ পা দিতে রাজি নন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই। শেষ দিনের ‘ফাঁদ’ এড়াতে গতকালই অনেকে পশু কিনেছেন। দুপুরের কড়া রোদ উপেক্ষা করে পশুর বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। পারত পক্ষে ক্রেতাদের ফেরত দিচ্ছে না বিক্রেতারাও। সব মিলিয়ে গতকাল প্রতিটি পশুর হাটেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। বাজারগুলো কোরবানির পশুতে কানায় কানায় ভরা। তবে হাটের অধিকাংশ গরুই দেশি ও স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা।

গত কয়েক দিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর-কষাকষির চিত্র বেশি দেখা গেলেও গতকাল যারা হাটে গিয়েছিলেন সবাই পশু কিনেই বাড়ি ফিরেছেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পশু কেনাবেচার চেষ্টা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। ক্রেতারা দেখে-শুনে পছন্দের গরুটির দরদাম করছেন। পছন্দ হলে মূল্য ও হাসিল পরিশোধ করে খুশিমনে পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গতকাল সকাল থেকে পাল্টে যাওয়া হাটের চিত্র সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, তারা শেষ দিনের ‘ফাঁদে’ পড়তে চান না। তাই আগামীকলের অপেক্ষা না করে কোরবানির পশুটি কেনার বা বেচার জন্য যেন গতকালই ছিল উত্তম সময়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close