ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৫ জুলাই, ২০১৮

ফ্রান্স না ক্রোয়েশিয়া

দেখতে দেখতে গত হয়ে গেল একটা মাস। ১৪ জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠেছিল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের ২১তম আসর। সেদিন লুঝনিকিতে জমায়েত হয়েছিল প্রায় ৮৮ হাজার দর্শক। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়া মুখোমুখি হয়েছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে। আজ আবার মস্কোতে ফিরছে ফুটবল ভক্তরা। ৩২ দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে আজ লুঝনিকির ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া।

রাশিয়া বিশ্বকাপ এরই মধ্যে তকমা পেয়ে গেছে ঘটন-অঘটনের বিশ্বকাপ হিসেবে। শুরু থেকেই আন্ডারডগদের দাপটে ঘরে ফিরে গেছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ব্রাজিলের মতো পরাশক্তির দলগুলো। তবে শুরুতে ফেভারিট না হলেও একের পর এক অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়ে ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপে ফরাসিদের এটি তৃতীয় ফাইনাল হলেও ক্রোয়াটদের জন্য প্রথম।

১৯৯৮ ঘরের বিশ্বকাপে উঠেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। এরপর থেকেই শুরু বিশ্ব ফুটবলে ফ্রান্সের আধিপত্য। গত ২০ বছরে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে চারটি ফাইনাল খেলছে ফরাসিরা। ২০০৬ বিশ্বকাপে জিনেদিন জিদানের নেতৃত্বে খুব কাছাকাছি গিয়েও ইতালির বিপক্ষে শিরোপা খোয়াতে হয়েছে তাদের। তাছাড়া ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও ঘরের মাঠে শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছে কোচ দিদিয়ের দেশমকে। আজ তাই আক্ষেপটা সুদে-আসলে ঘুচিয়ে ফরাসিদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে চাচ্ছেন দেশম। ম্যাচের আগে সেই কথাটি জোর দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন এই কৌশলী কোচ। ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আমরা সুযোগ সৃষ্টি করেছি কিন্তু আমরা এখনো চ্যাম্পিয়ন নই। তবে আমরা আমাদের ভাগ্যটা পরিপূর্ণ করতে চাই।’ ফাইনালে যাওয়ার পথে ফরাসিরা শেষ চারে হারিয়েছে বিশ্বকাপের ‘কালো ঘোড়া’ বেলজিয়ামকে। সেমিতে জয়ের পর চার দিন বিশ্রাম পেয়েছে দেশমের শিষ্যরা। ফাইনালের আগে যা তাদের জন্য প্লাস পয়েন্টও। তাছাড়া চোট কাটিয়ে দ্রুত সেরে উঠেছেন ব্লেইজ মাতুইদি। গত ম্যাচে ইডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে বল দখলের সময় চোট পান এই জুভেন্টাস মিডফিল্ডার। মাঠে ফরাসিদের আস্থার জায়গা মধ্য মাঠ। তবে আজকের ম্যাচে ফরাসিদের ব্যবধানটা গড়ে দিতে পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাছাড়া অধিনায়ক আঁতোয়ান গ্রিজম্যান বা অলিভিয়ের জিরোও কেড়ে নিতে পারেন স্পটলাইটটা। রক্ষণভাগে রাফায়েল ভারানে, স্যামুয়েল উমতিতি, বেঞ্জামিন পাভার, লুকাস হার্নান্দেজকে টপকে গোল দেয়াটা কঠিনই হবে প্রতিপক্ষের জন্য। আর গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী হুগো লরিস তো আছেনই। সেই ইতিহাস থেকেও প্রেরণা নিতে পারেন দেশম। তার নেতৃত্বেই তো ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার হৃদয় ভেঙে দিয়ে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ফ্রান্স।

ক্রোয়েশিয়া যে ফাইনালে উঠবে তা হয়তো বিশ্বকাপের আগে খুব কম লোকই ভেবেছিল। কারণ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেই যে তাদের ধুঁকতে হয়েছে। ইউক্রেনের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি হারলে বিশ্বকাপেই আসা হতো না ক্রোয়াটদের। কিন্তু ভাগ্যিস তারা একজন জøাতকো দালিচকে পেয়েছিল। অথচ বিশ্বকাপের আগে কজনই বা চিনতেন দালিচকে! দেশম বা গ্যারেথ সাউথগেটের মতো ভারিক্কি নয় তার প্রোফাইল। কিন্তু সেই অখ্যাত দালিচই আজ ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা। জাদুর কাঠির পরশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রূপকথার গল্প লিখে দলকে তুলেছেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। এর আগে সবচেয়ে কম জনসংখ্যা (৪০ লাখ) ও ছোট দেশ হিসেবে ফাইনাল খেলেছে উরুগুয়ে। এবার ৪২ লাখ জনসংখ্যার দেশকে ফাইনালে দেখল রাশিয়া বিশ্বকাপ।

তবে শিরোপা যুদ্ধে নামার আগে ক্রোয়াটদের ভাবতে হচ্ছে চোট নিয়ে। দলের দুই অন্যতম খেলোয়াড় পেরিসিচ ও মান্দজুকিচকে লড়তে হচ্ছে চোট নিয়ে। তাছাড়া ক্লান্তি তো আছেই। গত তিন ম্যাচে অতিরিক্ত ১২০ মিনিট খেলতে হয়েছে ক্রোয়াটদের। সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর বিশ্রাম পেয়েছে মাত্র তিন দিন। তবে এসব কোনো ব্যাপার না তা আগেই প্রমাণ করে দিয়েছে দালিচের শিষ্যরা। ক্রোয়াটরা যে ‘মানসিকভাবে’ অত্যন্ত শক্তিশালী তা মেনে নিয়েছেন ফরাসি মিডফিল্ডার পগবাও। স্বীকার করাটাই স্বাভাবিক। কারণ গত ম্যাচেই গায়ে ১২০ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে মাঠে ছিলেন ইভান রাকিটিচ। আর দালিচের ঢাল হিসেবে দলের প্রাণভোমরা লুকা মডরিচ তো আছেনই।

নতুন হিসেবে ক্রোয়াটরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কিনা তা সময় বলে দেবে। তবে আজকের ম্যাচটি তাদের জন্য একটি অঘোষিত প্রতিশোধের ম্যাচও। ১৯৯৮ বিশ্বকাপেই যে তাদের কাঁদতে হয়েছিল ফ্রান্সের বিপক্ষে। প্রথম ফাইনালেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আছে উরুগুয়ে, ফ্রান্স ও স্পেনের। আজ তাদের পাশে নামটা লেখাতে চাইবে ক্রোয়েশিয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist