সংসদ প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০১৮

সংসদে মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি

পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটও বাস্তবায়ন সম্ভব

এ বছর ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত এই বাজেট গত অর্থবছরের চেয়ে ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি, যা শতকরা হিসাবে ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য সংসদে উত্থাপিত এ বাজেট সামঞ্জস্যপূর্ণ। আগামী অর্থবছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে কুমিল্লা-৯ আসন থেকে নির্বাচিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ১৬ মিনিটের বক্তৃতায় দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এই স্বপ্ন পূরণের জন্য রাজনীতিতে পদার্পণের পর থেকে গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন। ঢাকা শহর এবং এর বাইরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত হয়ে মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের মাধ্যমে কৃষির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন। কারণ বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনশীল দেশ এবং কৃষিনির্ভর ছিল। ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাংলাদেশের মানুষ কাতর ছিল। মায়ের কাছে দু’মুঠো ভাতের জন্য সন্তান ক্রন্দন করত। এই করুণ পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বেশি অগ্রাধিকার দেন শেখ হাসিনা। কৃষি উৎপাদনকে নির্বিঘœ করার জন্য সার, কীটনাশক ও কৃষিপণ্য তাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই পদক্ষেপের পর দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় দেশ। তিনি বলেন, কৃষির পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নের পূর্বশর্ত। পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার মাঝপথে ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় না থাকার কারণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাধাগ্রস্ত হয়। পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসে। আগের মাঝপথে থেমে যাওয়া উন্নয়নগুলো এগিয়ে নিতে নতুন করে পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাত, যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, কৃষি উৎপাদন, শিল্পায়নসহ তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য একটা কম্প্রিহেনসিভ পরিকল্পা হাতে নিলেন। ৬ষ্ঠ ও ৭ম বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বর্ধিত বাজেট দিয়েছে এবং প্রণীত বাজেট বাস্তবায়ন করেছে। এর জন্য সমালোচনাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতির কারণে কৃষিসহ শিল্পায়ন ধ্বংসের পথে চলে আসে। কিন্তু অর্থ ঘাটতির পরও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত কুইক রেন্টাল নাম দিয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে নতুন প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করে সামনে দিকে অগ্রসর হয় সরকার। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে নানা সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের প্রশংসা পেয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নয় পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। আজ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, যা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তের কারণে সম্ভব হয়েছে। এটার পেছনে আমাদের প্রণীত বড় বাজেটগুলো কাজ করেছে।

তিনি বলেন, এবার ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার কারণে আমাদের থিংক ট্যাংক, পলিটিক্যাল পার্টি এবং ইন্টেলেচ্যুয়াল ফোরাম সবাই ভয় পেয়েছেন এবং ভয় দেখিয়েছেন। করেছেন সমালোচনাও। কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় অবিচল আস্থা নিয়ে এই বাজেট সংসদে পাস করার জন্য আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী। কারণ প্রণীত বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এ সময় এমপি তাজুল ইসলাম রবার্ট ফ্রস্টের একটি কবিতার পঙ্ক্তি দিয়েছে বাজেট বাস্তবায়নের উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, এবার যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট ঘোষণা করা হলেও সেটাও বাস্তবায়ন সম্ভব।

ব্যাংক সুদ নিয়ে সংসদে সমালোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য দুটি খাত রয়েছে। একটি মানি মার্কেট, অন্যটি ক্যাপিটাল মার্কেট। কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে কোনো দিকনিদের্শনা নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটের মাধ্যমে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সেক্টরে নজর দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ সারা বিশ্বে মানি মার্কেট থেকে স্থানান্তরিত হয়ে সবাই ক্যাপিটাল মার্কেটে আসে। এই সেক্টরে যদি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয় তাহলে বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হলো এই ক্ষেত্র। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগগুলো মানুষ করতে পারবে। কিন্তু এর জন্য সরকারকে এর সুরক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় পুঁজি হারানোর ভয়ে এই ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে, যা অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে নিরাপত্তা বন্ডের কথা আসছে। এখানে উচ্চ সুদ হারের কথা বলা হচ্ছে; এসব জায়গায় অর্থমন্ত্রীর নজর দেওয়া দরকার।

এমপিওভুক্তি বিষয়ে এমপি তাজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাখাতে আবহমান কাল থেকে ব্যক্তিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আমার নিজ এলাকায় আমার পিতার নামে ২ কোটি টাকার জমি দিয়ে একটি টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয় এই প্রতিষ্ঠানের পেছনে। এসব প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে সরকার আর্থিকভাবে এগিয়ে না এলে একটা পর্যায়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিভুক্ত করার জন্য সরকারের বাজেটে বড় ধরনের খাত রাখা প্রয়োজন।

রাজধানীতে যানজট প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, ঢাকা শহরে অসহ্য যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ হচ্ছে। শহরের একটা দর্শন রয়েছে। এখানে কতটুকু রাস্তা, অবকাঠামো কতটুকু থাকবে তার একটা নীতিমালা রয়েছে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হাউজিং কতটুকু হবে সেটারও একটা লক্ষ্যমাত্রা থাকা দরকার। তিনি বলেন, যতদূর জানি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি শহর নির্মাণের একমাত্র দর্শন দিয়ে ছিলেন। তার দর্শনে হাউজিংয়ে ৪০ শতাংশ যোগাযোগব্যবস্থা যানবাহন এবং খেলার মাঠের জন্য নির্ধারিত থাকার কথা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কতটুকু রাখা হয় তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ আপনি মাস্টার প্লান করবেন সেখানে কতজন মানুষ বসবাস করবে সেটাও চিন্তা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল না হয়ে আংকারা করা হয়েছে। আমাদের এখানেও এ বিষয় ভেবে দেখা দরকার। কারণ ঢাকা শহর প্রদর্শনীর জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া দরকার।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার। কারণ এয়ারপোর্ট এবং চবক দুটিই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে শুধু ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা সবাই ঋণি’, কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সমুদ্র বিরোধ নিষ্পতি করেছেন, সমুদ্র অর্থনীতি অর্জনসহ অনেক কিছু অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে, কিন্তু এখনো তা সম্ভব হয়নি। তাই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সুরক্ষিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আইন প্রণেতাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করা উচিত।

এলাকার উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, আমার এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটেছে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে নমিনেশন দিয়েছেন এবং এলাকার মানুষ তারা আমাকে ভোট দিয়ে বার বার নির্বাচিত করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist