পাঠান সোহাগ

  ১১ জুন, ২০১৮

প্রথম দিনেই ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়

অগ্রিম টিকিটে রেলপথে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল ছিল প্রথম দিন। শুরুর দিনই রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় ছিল ঈদে ঘরমুখো মানুষের। টিকিট হাতে নিয়ে ভোর থেকেই যাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে স্টেশন এলাকা। টিকিটের যাত্রীরা তো বটেই; টিকিট নেই এমন মানুষও ভিড় করে স্টেশনে। ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে উঠতে গিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।

কারো টিকিট আছে। কারো দাঁড়ানো টিকিট। আবার টিকিট নেই এমন যাত্রীদেরও ভিড়ও কম নয়। বিশেষ করে আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে এবারও ছাদে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

গতকাল রোববার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে ঈদযাত্রার এমন চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৬৩টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ২৮টি আন্তঃনগর। বাকিগুলো মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন। এসব ট্রেনের অগ্রিম টিকিটসহ সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার টিকিট দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু স্ট্যান্ডিং বা দাঁড়ানো টিকেটও দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এভাবে প্রায় এক লাখ যাত্রী যেতে পারবে। কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রথম দিনে ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিক ভিড় ছিল। এখনো উপচেপড়া ভিড় শুরু হয়নি। প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। ১২ জুন থেকে ভিড় বাড়বে। সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট দেরি করেছে। বাকিগুলো সঠিক সময়েই এসেছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারীরা সার্বক্ষণিক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। নিম্ন আয়ের মানুষজন ভাড়া বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে, ইঞ্জিনে বা বগির জোড়ায় উঠে বসেন। গত একবছরে ট্রেনের ছাদে ভ্রমন করে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছে কয়েক শ’। এরপরও তা বন্ধ করা যায়নি। এটা প্রতিহত করার জন্য আনসার, পুলিশ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মোতায়ন করা হয়েছে। তবু এটা সমাল দেওয়া যাচ্ছে না।

রেলের কর্মকর্তাদের মতে, ঈদের আগের তিনদিন যাত্রীদের চাপ বেশি হয়। বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। ট্রেনের ছাদে উঠতে যাত্রীদের বারবার নিষেধ করেও কোনো কাজ হয় না। বৃদ্ধ, নারী এমনকি শিশুদের নিয়েও ছাদে উঠে পড়েন অনেকেই। এ অবস্থায় রেলওয়ে কর্মকর্তা, আনসার, পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রীতিমতো কাজ করছে। সবাইকে নামানোও সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে সবসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।

রেলওয়ে সূূত্রমতে, এবার যে পরিমাণ মানুষ টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা আসনবিহীন টিকিটের অপেক্ষায় আছেন। এদের সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হবে না। টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের বড় একটি অংশ ছাদে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী ব্যাচেলর, নিম্ন আয়ের মানুষজনসহ টোকাই ও হকার রয়েছেন।

গতকাল সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা এক্সপেসে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ যাবেন আবদুস সালাম। তিনি বলেন, গত ১ জুন টিকিট কেটেছি। আজ (গতকাল) সাহরি খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় জ্যাম ছিল না। তবে ট্রেন আসতে কিছুটা দেরি হবে।

স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে উপকূল এক্সপেসে নোয়াখালী যাবেন স্কুল শিক্ষক মোর্শেদ আলম। তিনি জানান, টিকেট পেতে যেমন কষ্ট হয়েছে, ট্রেনে উঠতেও তেমনি কষ্ট। একইভাবে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিবারের সদস্যদের তুলে দিতে কমলাপুর এসেছেন সরকারি চাকুরিজীবি মো. মোজ্জামেল। তিনি বলেন, দুর্ভোগ না পোয়াতেই পরিবারের সবাইকে আাগে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি ঈদের দিন রাতে যাব। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা যাবেন কলেজ পড়–য়া ইকবাল হোসেন। তিনি টিকিটের জন্য বহুবার স্টেশনে এসেছেন। কিন্তু টিকিট পাননি। গতকাল নির্দিষ্ট সময়ে এসেও দাঁড়ানোর টিকিট মেলেনি। টিকিট না পেয়ে ইকবাল ও তার বন্ধু ট্রেনে উঠেছেন। পরিকল্পনা ছিল দাঁড়ানোর জায়গা না পেলে ছাদে বাড়ি ফিরবেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা অপরাধ। ভালো মানুষ ছাদে উঠে না। বিশেষ করে ঢাকা, আশুলিয়া, টঙ্গি, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ট্রেনের ছাদ উঠে ভ্রমণ করেন। ট্রেনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত রোধ করতে রেল কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। ঈদের আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে জানান তিনি।

স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, অগ্রিম টিকিট ছাড়াও স্টন্ডিং বা দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে কাউন্টারে। তবে কেউ যেন ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ি না ফিরেন সেই অনুরোধ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist