গাজী শাহনেওয়াজ

  ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

ফের জটিলতায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্প

ভূমি হস্তান্তরে সেতু কর্তৃপক্ষের উল্টো সুর

ফের জটিলতার ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প। ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা এ জটিলতার মূল কারণ। এর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর) ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) মধ্যে একটা সমঝোতা স্বাক্ষর হয়; সেখানে শর্ত ছিল বিনামূল্যে ভূমি হস্তান্তরের। এ কারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য রাখা হয়নি কোনো অর্থ বরাদ্দ।

কিন্তু,সেতু কর্তৃপক্ষ ভূমি হস্তান্তরে প্রকল্পের মাঝপথে এসে ভূমি মন্ত্রণালয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। ভূমি চিহ্নিতকরণের আগ-মুহূর্তে বিবিএর উল্টো সুরে প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে হবে। অন্যথায়, যমুনায় রেল সেতু নির্মাণে জাইকার সঙ্গে টানাপড়েন দেখা দিতে পারে। বঙ্গবন্ধু রলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প-সংক্রান্ত প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেনের সভাপতিত্বে স্টিয়ারিং কমিটির সভাটি গত মার্চের ১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রেল সেতু নির্মাণে অর্থ সহায়তা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে এক কানাকড়িও রাখা হয়নি বরাদ্দে। কারণ সরকারের এক মন্ত্রণালয়ের জমি অন্য মন্ত্রণালয়কে বিনামূল্যে হস্তান্তরের রেওয়াজ চালু রয়েছে। রেলওয়ের জমি ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগকে শর্ত ছাড়াই হস্তান্তর করার নজির রয়েছে।

এদিকে, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৃথক রেল সেতু নির্মাণ পথে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি না থাকায় ডিপিপিতি ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ বরাদ্দ রাখেনি সরকার। কারণ যে অংশে রেল সেতু নির্মাণ হবে তার বেশির ভাগ জমির মালিকানা সেতু বিভাগের। তাই জটিলতা এড়াতে বিআর ও বিবিএর মধ্যে নিঃশর্তে ভূমি হস্তান্তরে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তির শর্তে বিবিএর ১৫৫ দশমিক ২১৪ একর স্থায়ীভাবে এবং ২৩২ দশমিক ২৪৫ একর জমি অস্থায়ীভাবে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভূমি হস্তান্তরে কর্তৃপক্ষকে পত্র পাঠালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ এর রুল ৭৫ অনুযায়ী, ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে আলোচনার পর রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সেতু কর্তৃপক্ষের ভূমি হস্তান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়, যা এখনো অমীমাংসিত।

অমীমাংসিত ভূমি হস্তান্তর নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভা গত ১৯ মার্চ রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব ভূমি হস্তান্তর নিয়ে নতুন করে সভায় প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, একটি সরকারি সংস্থা থেকে অন্য সরকারি সংস্থায় জমি হন্তান্তর ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি সেতু বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়া জমি হস্তান্তর করা যাবে না এমনটি নয়; সরকার সম্মত থাকলে নামমাত্র মূল্যে জমি হস্তান্তর হতে পারে।

সেতু বিভাগের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে ডিজি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতিপূর্বে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে জমি প্রদান করেছে। এছাড়া বিআর ও বিবিএর মধ্যে ভূমি হস্তান্তরের লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে জমি হস্তান্তর করা প্রয়োজন। কারণ জাইকার অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। তাই জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।

প্রকল্প পরিচালয় সভায় তার বক্তব্যে বলেন, বিবিএর অনুমতি না থাকায় মাঠ পর্যায়ে ভূমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করা যায়নি।

পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পের ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বিবিএ ও বিআর এর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে বিনামূল্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবহারের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ হতে রেলওয়ের অনুকূলে ভূমি হস্তান্তরের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ কাজটি দ্রুত সমাধান করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত হয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায়।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ৭৪০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২০১ কোটি ৫৭ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। রেল সূত্র জানায়, বিদ্যমান যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমাতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রেল সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বছরওয়ারী প্রকল্পটির জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময় প্রকল্পটির বিষয়ে দুদেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনার সূত্রপাত ঘটে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist