কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২২ মার্চ, ২০১৮

নৌকায় ভোট দিন উন্নয়ন দেব

আবার নৌকায় ভোট দিলে দেশবাসীকে সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আবার নৌকায় ভোট দিলে দেশের মানুষকে উন্নত ও সন্দর জীবন দেব। গতকাল বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত লাখো মানুষের জনসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে উপস্থিত জনসাধারণকে ওয়াদা করান তিনি। ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি সরকারের নানা সাফল্য এবং অর্জনের কথাও তুলে ধরেন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মো. মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুজিত রায়, প্রচার সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম ও পটিয়ার সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে উপস্থিত জনসাধারণকে ওয়াদা করান। দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি সরকারের নানা সাফল্য এবং অর্জনের কথাও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। তার সেই লক্ষ্য পূরণে আমি নিরলসভাবে কাজ করছি। আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের জন্য আমার রাজনীতি। কাজেই জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন এবং এদেশকে আমি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সারাবিশ্বে আমরা আজ মাথা উঁচু করে কথা বলি। অথচ পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। বিশ্বব্যাংক নয়, নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু করে দেখাব। তা করে দেখিয়েছি, অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। আল্লাহর রহমতে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেনÑ দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন, শান্তিতে বসবাস করবে, সেই লক্ষ্যে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই সাড়ে তিন বছরের মাথায় নির্মমভাবে আমার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। দেশের মানুষের জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা রক্ত দিয়েছে। আমিও যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে এদেশের মানুষকে সুন্দর ও উন্নত জীবন দেব।

নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে ওয়াদা চান। বলেন, আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেবেন কি-না হাত তুলে ওয়াদা করুন। তখন নেতাকর্মীরা হাত তুলে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, মা-ছেলে দুর্নীতি করে বিদেশে টাকার পাহাড় জমিয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে সে টাকার কিছুটা আমরা উদ্ধার করেছি। ইয়াজুদ্দিন-ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। দেশের মাটিতে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। চট্টগ্রামে বিএনপি একদিন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যাযজ্ঞের যে তালিকা আমার হাতে রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের সময় চট্টগ্রামের কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, আমরা উন্নয়ন করি। আর বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশকে পিছিয়ে দেয়। বিগত নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। খালেদা ও তার দুই ছেলে কালো টাকা সাদা বানিয়েছে। তাদের পাচারের টাকা বিদেশে ধরা পড়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কারণেই এই দেশ বিধায় সবার আগে তাদের অধিকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি সবাই সর্বাগ্রে অধিকার ভোগ করবে। সে কারণে চাকরিতে আমরা কোটার ব্যবস্থা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই তো এই চাকরি করতে পারছেন, সুতরাং তাদের ছেলে-মেয়েরা এ সম্মান পাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ‘পুরো চট্টগ্রামে বর্তমান সরকার ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করছে। আমরা এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি, যেন তাদের সন্তানরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।’

এর আগে সকালে চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে সদ্য নির্মিত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উন্মোচন করেন কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে নির্মিত জাতির জনকের বৃহৎ আবক্ষ মূর্তি। এ সময় সরকারপ্রধানকে রেওয়াজ অনুযায়ী সালাম জানায় বাহিনীর পতাকাবাহী দল। পরে প্রধানমন্ত্রী যান যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার হাব চট্টগ্রামের নৌবাহিনী ডক- ইয়ার্ডে। সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পেশাগত নানা কৃতিত্বের স্বীকৃতি ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড তুলে দেন বিভাগটিকে। সেখানে বাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর অনিয়ম ও দুঃশাসনের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা যে বক্তব্য রেখেছেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি ঘোষণা করেছিলেন বাঙালি জাতি সম্পর্কে সেই উক্তি ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবে না’। বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারে নাই, পারবেও না। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পরে সেটাই প্রমাণ করেছি।

এর আগে বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে পটিয়া পৌঁছান। এ সময় তাকে আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। বুধবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটে হেলিকপ্টারে পটিয়া পৌঁছানোর পর ৪১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করে সোয়া ৩টার দিকে সমাবেশ মঞ্চে উঠেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনী ডক ইয়ার্ডে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীকে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং ডক ইয়ার্ডের কমোডর সুপারিনটেনডেন্ড কমোডর মনিরুল হক তাকে স্বাগত জানান। স্ট্যান্ডার্ড প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ বিশে^ মর্যাদার আসনে স্থান পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের নৌবাহিনী সফল মহড়ায় অংশ নিচ্ছে আবার নিজেরাও মহড়ার আয়োজন করছে। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় নানামুখী কর্মকান্ডে আমাদের নৌবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist